ভোটের তারিখ ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, কখন ভোট হবে সেটা সরকারের বিষয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো ক্লিয়ারেন্স পায়নি। তাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
রোববার (১৫ জুন) দুপুরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনীতিতে টানাপোড়েন যেভাবে অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছিল, লন্ডন বৈঠকে তা অনেকটা কেটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে- সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমান লন্ডনে কি আলোচনা করেছেন তা সবাই যতটুকু জানেন আমরা ততটুকু জানি এর বাইরে কিছু নেই। আমরা টেলিভিশনে দেখেছি এটা ফর্মাল ভাবতে পারছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয়নি কি ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবছি। যখনই ভোট হবে তখন যেন ভালোভাবে করতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের এখনো চিন্তা কীভাবে ভোটটা করা যায়। এর বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে তখন একটা তারিখ হবে। ভোটের ১০ মাস আগে কখনো তারিখ ঘোষণা হয় না। আমরা কোনো টার্গেট ফিক্সড করিনি। ভোটের তারিখ নিয়ে যত আলাপ আলোচনা সরকারই করেছে আমি করিনি। সরকার কোনো তারিখ ঠিক করেনি। লন্ডনে গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈঠক হয়েছে। টেলিভিশনে আমরা দেখেছি রমজানের আগেও ভোট হতে পারে। আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। তবে সরকারের সঙ্গে যখন কথাবার্তা হবে তারা কি ধরনের চিন্তা ভাবনা করছে। যখন আমরা একটা ধারণা পেয়ে যাবো তখন একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবো। এই মুহূর্তে আমরা তারিখ ঘোষণা করতে পারবো না।
কখন নির্বাচন হবে সেটা সরকারের বিষয় মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ভোটের তারিখ নির্ধারণে কোনো ক্লিয়ারেন্স পায়নি ইসি। তবে জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক ইসি প্রস্তুত। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে কবে নাগাদ এই আলোচনা হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি।
দলীয় রাজনীতিতে না জড়িয়ে ঈমানের সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রতি কাজ করার নির্দেশনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কারও হুকুমে বা কারও নির্দেশনায় কাজ করবে না ইসি। কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ করা হবে না। ভোটের বাক্স লুট করে কেউ নিয়ে যাবে, এমন স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন হবে। এটা এবার হতে দেবে না কমিশন। ভোটের বাক্স লুটের সুযোগ এবার কেউ পাবে না।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ভোট সন্ত্রাসীদের জন্য দুঃসংবাদ। ভোট সন্ত্রাসী করলে কেউ ছাড় পাবে না। ভোট সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স থাকবে।
তিনি বলেন, তফসিলের আগে ১৮ বছর যাদের হয়ে যাবে তাদের সবাই ভোট দিতে পারবে এমন উদ্যোগ নেবে কমিশন। এছাড়া ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে জানুয়ারির আগে তফসিল চায় না ইসি।
ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে সিইসি বলেন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশন একটা তারিখ ঘোষণা করবে। আমাদের সব কিছু নরমালি দেখতে হবে। দেশের জন্য বিশেষ পরিস্থিতি এখন। দেশে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ধরনের সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। এটা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় এটা অন্তর্বর্তী সরকার। শাসক দল আগে যেটা বহাল আছে সেটা অনুযায়ী হলে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে আমরা নির্বাচন দিতাম। যেহেতু এখন বিশেষ ধরনের সরকার, বিশেষ একটা পরিস্থিতি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটা আলোচনা চলছে। সংস্কারের বিষয়েও একটা আলোচনা চলছে।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, দেশবাসী আশা করছে সরকারের পক্ষ থেকে একটা তারিখ ঘোষণা হবে। আমরাও ওই রকম একটা আশা করছি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের পর দেখলাম দায় দায়িত্ব কিছুটা আমাদের ওপর আসবে বলে মনে হচ্ছে। আমিও বিষয়টি তেমন কিছু জানি না। সরকারের সঙ্গে একটা আলাপ আলোচনা না হলে হবে না। তবে আমরা কারও নির্দেশনায় কাজ করবো না। এটা একেবারেই পরিষ্কার। আমরা কারও হুকুমে কারও নির্দেশনায় এবং কারও পরিচালনায় কাজ করবো না। আমরা এখন প্রস্তুতির বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছি না।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি বলে আমরা বাক্স লুট করে নিয়ে যাবো, ভোট ছিনিয়ে নিয়ে যাবো তা হবে না। এটা হতে দেব না। সবাই সুন্দর ভোট চাই। ভোটের মাঠে আমরা নিরপেক্ষ রেফারি। তবে যারা ভোটের মধ্যে সন্ত্রাসী করতে চায় তাদের জন্য ইসি আতঙ্ক। এটা একটা ক্লিয়ার কথা। ভোট সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নো কম্প্রোমাইজ। এই ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স।
আমার বার্তা/এমই