প্রসাধনী আমাদের সৌন্দর্যকে বাড়ায় এটা খুব সত্যি। তাই প্রসাধনীর প্রতি আমাদের আগ্রহ আর দুর্বলতা দুটোই বেশি। কিন্তু আমরা প্রতিদিন যে প্রসাধনী ব্যবহার করি, সেগুলো আমাদের শরীর এবং ত্বকের যে পরিমাণ ক্ষতি করে তা আমাদের জানা নেই। তাই এখনই সচেতন হওয়া দরকার এই প্রসাধনীগুলোর ব্যাপারে-
>> ডিওডোরেন্ট : গবেষণায় প্রমাণিত, ডিওডোরেন্ট তৈরির উপকরণগুলিতে এমন কিছু থাকে যার ফলে ত্বকে ইরিটেশন সৃষ্টি হয়। এর ফলে চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে বেশি পরিমাণে ডিওডোরেন্ট জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভালো।
>> ব্লিচ ক্রিম : ত্বককে ফর্সা করতে অনেকেই মুখে ব্লিচ ক্রিম মুখে লাগান। এমন প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে হয়তো সুফল পাওয়াই যায়। কিন্তু এই ক্রিমগুলো ত্বকের মারাত্নক ক্ষতি করে। কারণ বেশিরভাগ ব্লিচ ক্রিমে থাকে হাইড্রোকুইনোনে উপাদান। যেটি ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর। ত্বকে র্যাশ উঠতে পারে, ভেতরে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়তে পারে।
>> ট্যালকম পাউডার : পাউডার আমাদের জন্য উপকারি, এটা সত্য। কিন্তু ট্যালকম পাউডার আমাদের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। এই কিছুদিন আগেও বিখ্যাত এক বেবি পাউডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে সেটি ব্যবহারে ক্যানসারে আক্রান্তের আশঙ্কা থাকে। আর বিভিন্ন গবেষণা বলছে, পাউডার ব্যবহার করলেই অ্যালার্জি এবং ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্যও কমে যায়।
>> কাজল : চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে কাজল ব্যবহার করেন না, এমন লোক কমই আছে। কিন্তু কাজল মোটেও চোখের জন্য ভাল নয়। কারণ কাজল বা সুরমা নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সেই সঙ্গে কনজিভাইটিস, উভেইটিস, গ্লুকোমা, ড্রাই আই এবং কনজাংটিভাল ডিসকালারেশনের মতো রোগে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ে। কারণ কাজলে থাকে টক্সিক উপাদান, যা সংবেদনশীল চোখের ক্ষতি করে।
>> লিপস্টিক : ঠোঁটের সৌন্দর্য বাড়াতে নারীদের একমাত্র পছন্দ লিপস্টিক। কিন্তু লিপস্টিক নিয়মিত লাগালে ঠোঁট আদ্রতা হারাতে শুরু করে। ফলে ঠোঁটের সৌন্দর্য কমে, ঠোঁটের ক্ষতি হয়। বেশিরভাগ লিপস্টিকেই এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা মোটেও ঠোঁটের জন্য ভাল নয়। কারণ অনেক লিপস্টিকে লেদের মতো ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই লেদ কেমিক্যালটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই একটু সাবধান হোন।
>> নেইল পলিশ : ছোটবড় সব নারীরই নেইল পলিশ অনেক পছন্দের। কিন্তু রং বেরঙের এই প্রসাধনিটি নখ এবং ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। বিশেষত লাল এবং কালো রঙের নেইল পলিশ নিয়মিত লাগালে বেশি ক্সতি হয়। সেই সঙ্গে কেমিক্যালের প্রভাবে নখ হলুদ হয়ে যায়। নেইল পলিশে থাকে অ্যাসেটোন উপাদান থাকে। এই কেমিকালটি নখকে দুর্বল করে দেয়। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে সৌন্দর্যও কমাতে শুরু করে।
>> ময়েসশ্চারাইজার : ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফেরাতে এই ক্রিম ব্যবহার হয়। কিন্তু আসলে এই ধরনের ক্রিম ত্বকের জন্য ভালো নয়। ময়েসশ্চারাইজারের কিছু উপাদান স্কিন বেরিয়ারকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে ত্বকের আদ্রতা বাড়ার পরিবর্তে আরও কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের নিজস্ব যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে তাও দুর্বল হতে শুরু করে।
>> হেয়ার কালার এবং হেয়ার ডাই : এই প্রসাধনী গুলো ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ে। সেই সঙ্গে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া ত্বকের প্রদাহ, সারা শরীরে লালা লাল ছোপ, চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও শুরু হয়। অনেক হেয়ার ডাইতে পিফেনাইলেনেডিয়ামাইন উপাদান থাকে, যা ক্যানসার পর্যন্ত ছড়াতে পারে। আবার রিপ্রোডাকটিভ টক্সিসিটি, নিউরোটক্সিসিটি, অ্যালার্জি, ইমিউন টক্সিসিটি এবং নানাবিধ ত্বকের রোগের প্রকোপ বাড়ায়। এমন কিছু তে চিকিৎসা নিলে একজন বিশেষজ্ঞ হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জনের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
লেখক : ম্যানেজার এন্ড চীফ কো-অর্ডিনেটর, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট
আমার বার্তা/মো. হেলাল উদ্দিন/এমই