‘শপথের মতামতের জন্য কেন আইন মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠালেন, জুলাইয়ের পরও তো সিস্টেম ঠিক হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার দরকার ছিল, কেন করেননি?’
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণার গেজেট জারির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে আপিল বিভাগ আরও বলেন, ‘এটাই ছিল লিটমাস টেস্ট। আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে করবেন?’
আদালত আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন কেন মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী হবে? নির্বাচন কমিশন শপথের বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কেন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠাবে? নির্বাচন কমিশন তার কাজ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন।’
পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায় আপিল বিভাগ।
আদালতে ইসির পক্ষে শুনানি করেন ড. মো. ইয়াছিন খান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এর আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
এরপর গত ২৭ এপ্রিল বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করতে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠান ঢাকার দুই বাসিন্দা।
নোটিশে মো. ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়। কিন্তু ওইদিন রাতেই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
গত ১৪ মে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় স্থগিতের পাশাপাশি তাকে মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। এছাড়া নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
মো. মামুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী আকবর আলী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।
গত ২২ মে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
আদেশে আদালত বলেন, রিট আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
ওই আদেশের ফলে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়াতে বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবীরা।
তবে গত ২৭ মে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া রিট খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গত ২৮ মে দিন ধার্য করেছিলেন চেম্বার জজ আদালত। পরে এ মামলায় বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট জারির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বক্তব্য শুনবেন বলে জানায় আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এ বিষয়ে দায়ের করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানির হবে একইদিন নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।
আমার বার্তা/এমই