শিকাগো স্কুল অফ প্রফেশনাল ফিজিওলজির পিএইচডি গবেষক ছিলেন ডা. ইশরাত আলম ইশিতা। তিনি আমেরিকার আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল স্কলারশিপও পান।
করোনার কারণে আমেরিকা যেতে না পারায় পড়াশুনা করেন অনলাইনে। এর মধ্যেই ২০২১ সালের ২৮ জুলাই বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। শুধু তাই নয়, সংস্থাটির হেডকোয়ার্টারে পাঁচ দিন রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাপেই ওই নারী চিকিৎসককে মামলায় ফাঁসায় র্যাব। ওই কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিন মাসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ভুক্তভোগী ওই নারী চিকিৎসক জানান, নির্যাতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া হয় তিনটি মামলা।
ইশরাত আলম ইশিতা বলেন, ‘তাদের (র্যাব) কথাটাই ছিল, এই পা নিয়ে যাতে বাসায় ফিরতে না পার এই ব্যবস্থা করব। এই পায়ে তারা, ওই মোটা মতো একটা স্টিক থাকে যে রডের মতো ওটা দিয়ে বারবার আমার পায়ে আঘাত করেছে।’
এরপর ১ আগস্ট ইশিতাকে নিয়ে আসা হয় গণমাধ্যমের সামনে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা ও প্রতারণার অভিযোগে ৩টি মামলা করে র্যাব।
ইশিতা বলেন, ‘স্কোয়াড্রন লিডার আলী আশরাফের নাম বলতে পারলাম যে আমাকে বাসা থেকে নিয়ে গেছেন উনি। মাদকসহ ভিডিও করেছেন সিনিয়র এসপি মো. আক্তারুজ্জামান। আর সার্টিফিকেট সব ভুয়া বলেছেন আইটি স্পেশালিস্ট রাকিব।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক বছরের সাজা খেটে উচ্চ আদালতে আপিল করেন ঈশিতা। চার মাস পর রায়ে উচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, কোন এক অজানা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাপে তাঁকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। জড়িতদের তিনমাসের মধ্যে খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি করারও নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ঈশিতাকে একটি মামলা থেকে খালাস দেয় আদালত।
ইশিতার আইনজীবী শেখ কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘দুটো মামলা হয়েছে, সাথে সাথে আরেকটি মামলা হয়েছে ১৩–১৪ ঘণ্টা পরে। তো, আপনি অ্যারেস্ট হলেন তারপরে আপনি আবার অপরাধ করলেন, আপনাকে আবারও অ্যারেস্ট করা হলো, এটা কীভাবে সম্ভব।’
মামলার বাদী র্যাব-৪ এর তৎকালীন কর্মকর্তা আমির আলী এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে অন্য কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘তারা (র্যাব) উঠিয়ে নেওয়ার পর আর ফেরত আসছে না, এমন অভিযোগ আছে। এবং এ ধরনের (নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা) বহু অভিযোগ আছে। আমরা দাবি তুলেছি যে একটা কমিশন গঠন করা হোক। যে কমিশন তথ্য অনুসন্ধান করবে, তদন্ত করবে।’
বাকি দুই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় দেশের বাইরে পড়তে যেতে পারছেন না ইশিতা।
আমার বার্তা/এম রানা/জেএইচ