দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের কয়েকজন মিত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করার পর এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি।
অবশ্য হঠাৎ করে এই নিষেধাজ্ঞা কেন তুলে নেওয়া হলো তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ বা হোয়াইট হাউস। শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের সেনাশাসকদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়, যখন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসা করে একটি চিঠিতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই সিদ্ধান্তকে “চরম উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছে। তাদের মতে, এতে বোঝা যাচ্ছে— মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের কড়া নীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, মিয়ানমারের যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, তারা হলেন— কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস ও এর প্রতিষ্ঠাতা জনাথন মিও কিয়াও থাং, এমসিএম গ্রুপ ও এর মালিক আউং হ্লাইং, সানটেক টেকনোলজিস ও এর মালিক সিত তাইং আউং এবং সেনা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি টিন লাত মিন।
এর মধ্যে কেটি সার্ভিসেস ও জনাথন মিও কিয়াও থাংকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। বাকিদেরও মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা খাতে সংশ্লিষ্টতা এবং সেনা সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ার কারণে ২০২২-২৪ সালের মধ্যে নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে হঠাৎ করে এই নিষেধাজ্ঞা কেন তুলে নেওয়া হলো তা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ ব্যাখ্যা করেনি এবং হোয়াইট হাউসও এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি।
এর আগে জুলাইয়ের ১১ তারিখে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাঠানো এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক হার কমানো ও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের অনুরোধ জানান। চিঠিতে তিনি ট্রাম্পের “দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব” ও “জাতীয় উন্নয়নের পথনির্দেশনায় অবদানের” প্রশংসা করেন।
মিয়ানমারের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর ঘোষণার জবাবে মিন অং হ্লাইং বলেন, তারা এই হার ১০ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি জানান, মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে শুল্ক হার শূন্য থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, “নিষেধাজ্ঞাগুলো দুই দেশের জনগণের সমন্বিত স্বার্থ ও উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে”। তাই তিনি ট্রাম্পকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও শিথিল করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত চমকপ্রদ ও নীতিগতভাবে অস্বচ্ছ। এর মাধ্যমে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনা সরকারের প্রতি তার পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসছে।”
তিনি আরও বলেন, “মাত্র চার বছর আগে একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনা সরকার ক্ষমতা দখল করে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সেইসব নির্যাতনের শিকার মানুষদের কাছে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে যারা এখনো গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন।”
আমার বার্তা/জেএইচ