যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাঝে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাদের মাঝে এই ফোনালাপ হয়েছে বলে বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।
তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের আলোচনার সময়ে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘর্ষ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে দুই নেতার প্রায় ৩৫ মিনিট আলোচনা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘাতের সময় পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে।
এদিকে, ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের। সেই বৈঠকের আগেই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে।
বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেদিন তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সমর্থনের কথাও জানিয়েছিলেন। এরপর দুই নেতার মাঝে প্রথমবারের মতো কথা হয়েছে বুধবার।
তিনি বলেন, এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। মিশ্রি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ২২ এপ্রিলের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পের কথা বিশ্বের কাছে জানিয়ে দিয়েছিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ৬ ও ৭ মে রাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মিরে কেবল জঙ্গি ঘাঁটি ও গোপন আস্তানাকে নিশানা করেছিল ভারত। পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং উত্তেজনা যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেরকমই পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে কোনও আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেওয়ার বিষয়টিও পরিষ্কার করেছিল দিল্লি।’’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বিক্রম মিশ্রির ভিডিও বার্তাটি শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে পররাষ্ট্রসচিব বলছেন, ‘‘গত ৯ মে রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। সেদিন তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান ভারতে বড়সড় হামলা চালাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, যদি এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ভারত আরও কড়া জবাব দেবে।
মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের বিষয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘‘ভারত ৯-১০ মে রাতে পাকিস্তানের হামলার কঠিন জবাব দেয় এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে। তাদের সামরিক বিমানঘাঁটিগুলো অকেজো করে দেওয়া হয়। ভারতের দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে পাকিস্তান সামরিক অভিযান বন্ধের অনুরোধ করতে বাধ্য হয়।’’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই গোটা ঘটনাক্রমে কোনও সময়েই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা বা যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন ট্রাম্প ও মোদির মাঝে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তড়িঘড়ি ফিরে যাওয়ায় সেই আলোচনা হয়নি। এরপরে ট্রাম্পের আগ্রহেই দুই নেতা ভারতীয় সময় বুধবার সকালে টেলিফোনে কথা বলেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব। -- সূত্র: বিবিসি
আমার বার্তা/এমই