জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসো হামলা ঘিরে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। ঘটনার পর থেকেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, পদক্ষেপ আর হুমকি-ধমকিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি; দানা বাঁধছে যুদ্ধের ভীতি। যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সীমান্তে নিয়মিত মহড়ার পাশাপাশি একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ; যেমনটা ঘটেছে আজ সোমবারও (৫ মে)।
এদিন আরও একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান। খবর দ্য ডনের।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সোমবার সফলভাবে ফাতাহ সিরিজের ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য একটি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে পাকিস্তান। চলমান সামরিক মহড়া এক্স ইন্ডাস-এর অংশ হিসেবে এ পরীক্ষাটি চালানো হয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এই উৎক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং ক্ষেপণাস্ত্রটির উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম ও নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য যাচাই করা।
দ্য ডন বলছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কৌশলগত সংস্থার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণ করা হয়। পরে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান ও সেনাবাহিনী প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্য, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান এবং দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন।
সোমবার পরীক্ষিত ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ১২০ কিলোমিটার। ফাতাহ সিরিজের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি পাকিস্তানের কৌশলগত অস্ত্রভাণ্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম ও টার্মিনাল গাইডেন্স প্রযুক্তির মাধ্যমে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এটি।
উল্লেখ্য, এর আগেও ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ফাতাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তান, যা বর্তমানে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই উৎক্ষেপণটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের দিক থেকেও চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান।
আমার বার্তা/জেএইচ