বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া টিউলিপ ব্যক্তিগতভাবেও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। দুর্নীতির এসব অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় রোববার (১৩ এপ্রিল) তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের আদালত।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা দুর্নীতির মামলা আজ আদালতে উঠছে। এসময় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। আর এটি হলে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য টিউলিপের বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের পথও প্রশস্ত করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা একই মামলায় বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তাই ধারণা করা হচ্ছে টিউলিপের বিরুদ্ধেও এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ নাগরিক টিউলিপ যুক্তরাজ্যের নগরমন্ত্রী হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসে। এতে দলের ভেতরে বাইরে চাপে পড়েন টিউলিপ। শেষমেশ লেবার মন্ত্রিসভার ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সেটি টিউলিপকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের পথও প্রশস্ত করবে। কারণ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর তিনি যদি আত্মসমর্পণ না করেন তবে, বিদেশি কোনো মামলায় পলাতক আসামি হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হবে। এমনটি হলে নিজ ভূমিতে বিচারের জন্য ব্রিটেনের কাছে টিউলিপকে ফেরত চাইতে পারবে বাংলাদেশ।
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তারপর থেকে তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জমি বরাদ্দ ও আর্থিক অনিয়মের একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। দুদকের দাবি, রাজধানীর পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্রায় ৬০ কাঠা (এক একর) সরকারি জমি শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও নিকটাত্মীয়দের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, ঢাকায় তার অন্য একটি সম্পত্তি থাকার কারণে জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনি অযোগ্য ছিলেন। তবে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মকানুনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এই মূল্যবান জমি বরাদ্দ নেন। এ জন্য তারা পাবলিক লটারি এবং যোগ্যতার মানদণ্ড এড়িয়ে গেছেন, যা মূলত সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ছিল।
পূর্বাচলে প্লট বাগিয়ে নেয়ার মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে হাসিনা পরিবারেই ছয় সদস্য রয়েছে। এর আগে, শনিবার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দেশটির পার্লামেন্টের কাছে ‘মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ উঠে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরো আত্মসাতের অভিযোগে নাম আসে টিউলিপ সিদ্দিকের। এ খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর চাপে পড়েন তিনি। এরপর খবর বের হয়, টিউলিপ লন্ডনে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের দেওয়া একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন। টিউলিপ প্রথমে অস্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি সত্য বলে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে।
আমার বার্তা/এমই