দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহার হয়ে থাকে বাংলাদেশে। শতকরা বিবেচনা এই হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবছর এই তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক অকালে মৃত্যু রবণ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করে তার থেকে ৩৪ শতাংস বেশি খরচ হয় তামাকের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা বাবদ।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে তামাকপণ্যের কার্যকর করারোপের দাবিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ইয়ুথ কনফারেন্সে এসব তথ্য জানানো হয়।
কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দেশে তামাক ব্যবহার হ্রাস ও তামকজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে সভায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ-বছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য যেসব দাবি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- সিগারেটের বর্তমান চারটি স্তরকে কমিয়ে তিনটি স্তরে নামিয়ে আনা। অর্থাৎ নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে একটি স্তর করা এবং এ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০ টাকা নির্ধারণ করা। এছাড়াও কনফারেন্সে সব স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ করার দাবি করা হয়। এমনকি উচ্চ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৩০ টাকা, এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৮০ টাকা কারার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এসময় জানানো হয়, উপরোক্ত তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৬ লক্ষ অকালমৃত্যু রোধ করা যাবে, প্রায় ১৬ লাখ তরুণকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা যাবে। এমনকি এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থ-বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য ড. মো. শহিদুল ইসলাম।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ মোমেনা মনি বলেন, তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও তা নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। সিগারেটের মূল্য স্তরগুলোর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে সিগারেট ব্যবহারকারীর মূল্য স্তর পরিবর্তন করে কম মূল্য স্তরের সিগারেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করতে হবে। পর্যায়ক্রমে একক মূল্যস্তর পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি, তার মধ্যে আছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, আমরা অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি যেন নাটক সিনেমায় তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি যেন পাঠ্য পুস্তকে তামাকবিরোধী তথ্য ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়।
ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি করে এটিকে মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে নেওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায়। কিশোর-তরুণদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তামাকপণ্যের উচ্চ মূল্য কিশোর-তরুণদের তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে। গবেষণায় দেখা যায় ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে এর ব্যবহার কমবে ৭.১ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, একক শলাকার মূল্যে খুচরা পয়সা থাকলে বিক্রেতারা খুচরা অংশটুকু বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ টাকায় বিক্রি করে। এতে তামাক ব্যবহারকারীরা বেশি দামে কিনলেও বর্ধিত মূল্য থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না কিন্তু ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি পায়।
ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য এবং তামাককর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ। এতে করে তরুণ ছেলে মেয়েদের তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমার বার্তা/এমই