শুটিং করতে গিয়ে যা যা হয়েছে তাতে মনে হয় সিরিজের নাম ‘ফ্যাঁকড়া’ খুবই যথাযথ। সাত পর্বের ওয়েব সিরিজটির শুটিং হয় গত বছরের আগস্টে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন অস্থির। কারফিউ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি, সরকারের পতন—এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা–মানিকগঞ্জ আর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১৩ দিন শুটিং করতে গিয়ে যা হয়েছে, চাইলে সেটা নিয়েই একটা তথ্যচিত্র বানিয়ে ফেলা যায়।
‘একবার তো গ্রামের মানুষজন লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে সাত-আটটা গাড়ি, অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী মিলিয়ে বিশাল বহর; গ্রামবাসী ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তখন যা অবস্থা ছিল তাতে তাদের দোষ দেওয়া যায় না।’ গত সোমবার মুঠোফোনে বলছিলেন সিরিজের নির্মাতা আসিফ চৌধুরী।
আসিফ জানান, ২০২৩ সালের দিকে সিরিজটির পরিকল্পনা হয়। ইচ্ছা ছিল সীমিত বাজেটে স্বাধীনভাবে সিরিজটি তৈরি করবেন। পরে প্রকল্পটিতে যুক্ত হয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ। সাত পর্বের ‘ফ্যাঁকড়া’ মূলত সম্পর্কের গল্প। মোটাদাগে বলতে গেলে, ভালোবাসার মানুষের জন্য একজন কী করতে পারে, সেটাই সিরিজের মূল সুর।
‘অনেক সিনেমা বা সিরিজ চরিত্রনির্ভর হয়ে থাকে, তবে আমরা গল্পতে বেশি জোর দিয়েছি। এখানে কেউই নায়ক নয়, সবাই গল্পের অংশ। ছয় থেকে সাতটি প্রধান চরিত্র আছে, যাদের সবারই আছে একটি বিশেষ “অতীত”। শেষ পর্যন্ত তারা কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, সেটিই দেখবেন দর্শক,’ বলেন আসিফ চৌধুরী। নির্মাতা আগে ছিলেন শিল্প নির্দেশক। কাজ করেছেন দীপঙ্কর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ। এটিই তাঁর প্রথম সিরিজ।
গত সপ্তাহেই এসেছে সিরিজটির ৫০ সেকেন্ডের টিজার। ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ভুলে মৃত্যু, পিছু নেয় প্রতিশোধ। সময় চলছে, পালানোর নয়!’ সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখেছেন নেয়ামত উল্লাহ ও আহাম্মদ সাদ। “ফ্যাঁকড়া”য় দেখা যাবে শ্যামল মাওলা, নিশাত প্রিয়ম, নিদ্রা দে নেহা, পার্থ শেখ, মীর রাব্বি, আবদুল্লাহ আল সেন্টু, কাজী আবরার, সারাহ আলম, এ কে আজাদ সেতু, হাসনাত রিপনসহ আরও অনেক নবীন–প্রবীণ শিল্পীকে। কেন একদল তরুণকেই বেছে নিলেন?
নির্মাতা বলেন, শুরুতে সিরিজটি তাঁরা সীমিত পরিসরে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, সে কারণে খুব বেশি পরিচিত মুখ রাখতে চাননি। ‘আমি চেয়েছি এমন সব শিল্পীকে নিতে, যাদের সঙ্গে কাজ করা সহজ হবে। সিরিজটি দেখার পর দর্শক বুঝবেন, অভিনয়শিল্পী নির্বাচন কতটা যথাযথ ছিল। আমি সততার সঙ্গে গল্পটি বলতে চেয়েছি, সে জায়গা থেকে যাদের কথা মনে হয়েছে নিয়েছি।’
সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন শ্যামল মাওলা। কয়েক বছর আগে ওটিটিতে তাঁকে নিয়মিত দেখা যেত, ইদানীং সেভাবে কাজ করছেন না। তিনি বলেন, সিরিজের পুরো গল্পটা তাঁর কাছে রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে, এ জন্য রাজি হতে দ্বিধা করেননি। শ্যামল মাওলার সঙ্গে সিরিজে বেশির ভাগ দৃশ্য করেছেন সারাহ আলম।
তিনি বলেন, আগেও তিনি শ্যামল মাওলার সঙ্গে কাজ করেছেন; সেই অভিজ্ঞতা এত ভালো ছিল যে দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়েই রাজি হয়ে গেছেন। তা ছাড়া নিজের অভিনীত চরিত্রটিও তাঁর পছন্দ হয়েছে।
সিরিজে যুক্ত হওয়ার মজার গল্প শোনালেন নিদ্রা দে নেহা। জানান, এই সিরিজের তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন রাতের খাবার খেতে গিয়ে! ‘একবার আমি, প্রান্তর (দস্তিদার, নিদ্রার স্বামী), নির্মাতা আসিফ ভাই আর পার্থ (শেখ) ডিনার করছিলাম। আসিফ ভাই আমার খাওয়া দেখেই বলেন, “তুমিই আমার সিরিজের গোলাপি হতে পারবে।” সিরিজে গোলাপি গ্রামের মেয়ে।
আমার খাওয়ার মধ্যে কোথাও একটা সারল্য ছিল, সেটাই হয়তো তাঁর মনে ধরেছে। পরে চিত্রনাট্য পাই, সিরিজটির সঙ্গে যুক্ত হই। বলা যায়, এই প্রথম কোনো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করলাম,’ বলেন নেহা।
‘ফ্যাঁকড়া’ আজ বঙ্গতে মুক্তি পাবে। নির্মাতা জানান, সিরিজটির দ্বিতীয় মৌসুমও আসতে পারে।
আমার বার্তা/এল/এমই