পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনে মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৫০ লাখ লিটার তেল ঢাকা অঞ্চলে পৌঁছাবে। ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্প ১৬ আগস্ট চালু হচ্ছে।
প্রি-কমিশনিংয়ের পাশাপাশি সেন্ট্রাল অটোমেশন, টেলিকমিউনিকেশন ও ফাইন টিউনিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ৩ কোটি লিটার তেল পাইপলাইনে প্রবেশ করানো হয়েছে। আগে শতাধিক কোস্টাল শিপে এসব তেল পরিবহন হলেও এখন পাইপলাইনে সময় বাঁচবে অন্তত দেড় দিন।
প্রথমে রিফাইন ডিজেল নেয়া হবে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ৯টি ট্যাংকে। সেখান থেকে ডিজেল যাবে ডেসপাস টার্মিনালে, এরপর পাম্পিংয়ের মাধ্যমে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় পৌঁছাবে। এতে বছরে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অর্থায়নে শুরু হওয়া ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ২৪২ কিলোমিটার এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের আরও ৮ কিলোমিটার পাইপ বসানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে: বিপিসি
এছাড়া কুমিল্লায় পেট্রোলিয়াম ডিপো স্থাপনসহ সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এবং ফতুল্লায় যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের রিজার্ভার বসানো হয়েছে।
পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আমিনুল হক জানান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার ডিপো থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিপোতে জ্বালানি পাঠানো যাবে। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে জ্বালানি পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ১২ ঘণ্টা।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের বাস্তবায়নে নির্মিত এ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বিশেষ করে পতেঙ্গার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেই পুরো পাইপলাইনের তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। বছরে এই প্রকল্প থেকে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এর মধ্যে ৯০ কোটি টাকা খরচ হলেও কমবে অন্তত ২৩৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানান, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল লেনদেনের সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই পুরো পাইপ লাইনের তেল সরবরাহ মনিটর করা যাবে।
দেশের মোট চাহিদার ৩০ শতাংশ জ্বালানি তেল ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ব্যবহার হয়। প্রথম পর্যায়ে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও ভবিষ্যতে এই পাইপলাইন বাঘাবাড়ি-আশুগঞ্জ ও ভৈরব পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এতে তেলের সরবরাহ ৬ লাখ মেট্রিক টন বাড়িয়ে ২১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই