বাণিজ্যিক ব্যস্ততায় দিন দিন কর্মচাঞ্চল্যে পরিণত হচ্ছে মোংলা সমুদ্র বন্দর। দেশি-বিদেশি আমদানি-রফতানিকারকদের আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কন্টেইনারবাহী জাহাজের আগমনও। বন্দরের চাপ সামাল দিতে ৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি নতুন জেটি নির্মাণ শুরু করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আরও চারটি জেটি নির্মাণের মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে বন্দরে ৫ থেকে ৯ নম্বর নামে মোট পাঁচটি জেটি চালু রয়েছে, যা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। অথচ ১৯৫০ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এই পাঁচটি জেটি দিয়েই চলছিল বন্দরের মূল কার্যক্রম। সময়ের পরিবর্তনে বাড়তে থাকা চাপ সামাল দিতে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরতা কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩ ও ৪ নম্বর দুটি জেটি নির্মাণে হাত দিয়েছে, যার নির্মাণকাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।
৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য জেটি দুটি চলতি অর্থবছরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক কমোডর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার।
তিনি জানান, নতুন ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণের প্রস্তাব একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। সব জেটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দর হয়ে উঠবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক হাব।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেটি সম্প্রসারণের ফলে পণ্য ওঠানামায় জটিলতা কমে আসবে এবং বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে বন্দরের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আমদানিকারকদের। বিশেষ করে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা গেছে এ অর্থবছরে।
এছাড়া ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্প’ ও পশুর চ্যানেলের ড্রেজিং সম্পন্ন হলে বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারবে। এ প্রকল্প শেষ হলে মোংলা বন্দর বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং চার লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দরে চলমান দুটি জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে বছরে আরও দুই লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, বর্তমানের চলমান চারটি প্রকল্প সম্পন্ন হলে বন্দর আরও গতিশীল হবে। বন্দরের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা বাড়বে, ব্যবসায়ীদের সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে।
বন্দর সংশ্লিষ্টদের মতে, জেটি সম্প্রসারণ কার্যক্রম শেষ হলে মোংলা বন্দর হয়ে উঠবে দেশের দ্বিতীয় নয়, সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সমুদ্র বন্দর।
আমার বার্তা/এল/এমই