জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আর থাকছে না আগের কাঠামোয়। সরকার গতকাল সোমবার এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক ইউনিট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুরো প্রক্রিয়াটি গোপনে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করেই অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন কাঠামোতে রাজস্ব সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ এবং ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতা না রেখে বরং এনবিআরের পূর্বের ক্ষমতা প্রশাসন ক্যাডারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে রাজস্ব প্রশাসনের অভ্যন্তরে বিদ্যমান ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
সোমবার সকালে অধ্যাদেশ জারির গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীর এনবিআর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হন। ফলে কার্যত কিছু সময়ের জন্য রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই একটি স্বতন্ত্র রাজস্ব সংগ্রহকারী সংস্থা রয়েছে, যা নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন—দু’টিই একসঙ্গে করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা বা আলোচনার ধার না ধরেই দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠান এনবিআরকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যে প্রভাব পড়বে—তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতামত নেওয়া হয়নি। এমনকি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটি কিংবা এনবিআর সংস্কার পরামর্শক কমিটির সুপারিশও এ সিদ্ধান্তে বিবেচনায় আসেনি।
নতুন কাঠামোয় প্রশাসনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রশাসন ক্যাডারসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের দাবি, এসব পদে মূল কর্তৃত্ব থাকবে প্রশাসন ক্যাডারের হাতেই। ফলে দীর্ঘদিন রাজস্ব প্রশাসনে কাজ করা ক্যাডারের অভিজ্ঞতা উপেক্ষিত হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের দুইটি শীর্ষ অ্যাসোসিয়েশন মঙ্গলবার একটি বৈঠকে বসছে। বৈঠকে পরবর্তী করণীয় ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বরং এমন এক কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অভিজ্ঞতা না থাকা কর্মকর্তাদের পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার গুণগত মান ও দক্ষতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। একইসঙ্গে, বর্তমান কর্মরত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির পথও সংকুচিত হয়ে পড়বে বলে তারা মনে করছেন।
আমার বার্তা/জেএইচ