বাংলাদেশে ব্রাঞ্চ কিংবা লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করলেও আয়ের উপর কর দিচ্ছে না বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেবল উৎসে কর নিয়ে খুশি থাকতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। চুক্তির ফাঁকফোকরে আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আয়কর আদায়ে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
এদিন বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে আইসিএসবি, আইসিএমএ, বাংলাদেশ ট্যাক্স ল'ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভ্যাট প্রফেশনাল ফোরাম।
আইসিএবির পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশে আয় করে তাহলে তাকে কর দিতে হয়। আমরা গুগল, আমাজনকে এখন ডিজিটাল সার্ভিসে আনতে পারবো না। তারা হয়তো উল্টো ট্যারিফ বসাবে। যেসব বড় বড় প্রকল্প অতীতে হয়েছে, সেগুলোতো বাংলাদেশেই হয়েছে।
তাদের কাছ থেকে কেবল উৎসে কর্তনের টাকা নিয়ে আমরা খুশি। আমাদের কী কেবল উৎসে কর্তনের টাকা নিয়ে খুশি থাকা উচিত? নাকি তাদের আয়ের ওপর কর আদায় করা উচিৎ? এটা আইনের সমস্যা নয়। এটা বাস্তবায়নের সমস্যা, যোগ করেন স্নেহাশীষ।
তিনি বলেন, এমন কিছু ট্রানজেকশন আছে যেগুলো বাংলাদেশে ধরা যায় না। কারণ এগুলোতে সরকার-টু-সরকার চুক্তির মাধ্যমে টাকাটা আসে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটা আমরা অ্যাড্রেস করছি। সরকারি প্রকল্পে নেওয়া বিষয়বস্তুর কাঠামো ঠিক করতে হবে। সেখানে আলাদা করে বলতে হবে। যখন প্রকল্পের চুক্তিগুলোর ভেটিং নেই তখন সেগুলো বলতে হবে। এখানে ব্যাপক কর ফাঁকির সুযোগ আছে। সমস্যাগুলো চুক্তির ভেতরে। যখন চুক্তির ভেতরেই বলে দেয় পেমেন্ট দেশের বাইরে হবে, করটা প্রকিউরমেন্ট এনটিটি দেবে কন্ট্র্যাক্টর দেবে না, তখনই সমস্যাটা তৈরি হয়। এ জায়গায় আমাদের বড় দিকনির্দেশনা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় প্রকল্প। ১ হাজার কোটি টাকা, দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ব্যবসাটা তারা এখান থেকে করছে। কিন্তু করটা চাপিয়ে দিচ্ছে এ দেশের সরকারের ওপর। এখান থেকে বের হওয়া উচিত।
আলোচনায় জমির মৌজা মূল্য হালনাগাদকরণ প্রসঙ্গে আইসিএবির পক্ষ থেকে স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে ভূমির ও ফ্ল্যাটের বাজার মূল্যের তুলনায় মৌজা মূল্য কম হওয়ায় অপ্রদর্শিত অর্থের সৃষ্টি হচ্ছে। জমি বা ফ্ল্যাটের মৌজা মূল্য সময় সময় হালনাগাদ করে ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। এর মাধ্যমে এনবিআরের রাজস্ব হ্রাস এবং অপ্রতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রস্তাবের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জমির প্রকৃত মূল্য মৌজায় নিয়ে আসার পক্ষে। তবে সমস্যা হচ্ছে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আমরা কর ব্যাপকহারে কমাতে চাই। ধীরে ধীরে এটা ন্যূনতম করতে চাই। সমস্যা হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কী করবে! আমাদের কাজ আমরা করবো।
আইসিএমএবি'র বাজেট প্রস্তাবে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য আলাদা কর দিবস করা, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে আয়কর উচ্চহার যৌক্তিক করা, কৃষিজাত পণ্যের উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতির দাবি জানায় প্রতিষ্ঠানগুলো।
কর অব্যাহতি প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর অব্যাহতির কথা বলবেন না। কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না। সৈয়দ মুজতবা বলেছেন বই কিনে দেউলিয়া হয় না। আমি বলবো কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছে বলে শুনি নাই। করতো আয়ের ওপর, ব্যয়ের ওপর না। তাহলে দিতে সমস্যা কোথায়? নতুন করে কর অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলবেন না। আমরা চাই যতটুকু আছে তাও কমিয়ে আনা, ধীরে ধীরে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া।
আমার বার্তা/এমই