সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন বাল্যবিবাহ হওয়া বাবা-মা। এতে শিশুর ১৮ ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, অভিভাবকরা লিখিতভাবে প্রতিকার চাইলে বিষয়টি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
শিমু তার শিশু সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে বেশ কয়েকদিন ধরে যশোর পৌরসভায় ঘোরাফেরা করছেন। অনলাইনে আবেদন করলেও সফটওয়্যারে তার আবেদন গ্রহণ করছে না। বলা হচ্ছে শিশুটির মায়ের বয়স ১৮ বছরের কম।
ভুক্তভোগী শিমু বলেন, ‘অমার জন্ম সাল ২০০৮। আমার জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী আমার বয়স ১৮ না হওয়ায় আমার মেয়ের জন্মনিবন্ধন করা যাবে না বলে দিয়েছে। কিন্তু মেয়ের জন্মনিবন্ধন করা জরুরি। এজন্য বার বার পৌরসভায় আসছি। কথা বলছি। দেখি সমস্যার সমাধান করতে পারি কিনা।’
শুধু শিমু সন্তান নয়, সারাদেশে তার মতো ১৮ বছরের কম বয়সী মায়ের সন্তানেরা জন্মনিবন্ধন করতে পারছে না। এমনকি বাবার বয়স ২২ বছরের কম হলেও জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে না।
যশোর পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মাসুদ রানা বলেন, বাংলাদেশে আইন করে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও অনেকের বাল্যবিয়ে হচ্ছে এবং তারা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। জন্মনিবন্ধনের নতুন সফটওয়্যার আসার পর আমরা অনেক আবেদন পেয়েছি, যাদের মায়ের বয়স ১৮ বছরের কম। অনলাইনে তাদের জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে ফেরত দিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করণীয় নেই।
যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে এ ধরনের ৪/৫টি আবেদন পাই। কম বয়সী বাবা-মায়েরা সন্তানদের জন্মনিবন্ধনে সৃষ্ট সমস্যার কথা বললেও তারা মানতে চান না। অনেকে দুর্ব্যবহারও করেন।’
ইউনিয়নের সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘বাল্যবিবাহের জন্য এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার বাবা-মায়ের কারণে শিশুটি তার প্রথম নাগরিক অধিকার জন্মনিবন্ধন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে ওই শিশুর টিকা গ্রহণ, স্কুল ভর্তি থেকে শুরু করে ১৮ ধরনের সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর একটি আশু সমাধান প্রয়োজন।’
বাল্য বিবাহে কাজিদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যশোর জেলা কাজী সমিতির সভাপতি মাওলানা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অসাধু কাজিদের আশ্রয়ে একটি চক্র বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করছে। এদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালেও সংশোধন হয় না। জেল থেকে বেরিয়ে আবারও তারা বাল্যবিবাহ নিবন্ধন করে। এই চক্রের লাগাম টানতে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে অনলাইন বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। এতে জনগণের উপকার হবে। বাল্যবিবাহের কুফল থেকেও মানুষ মুক্তি পাবে।’
জন্মনিবন্ধনের এ জটিলতা সম্পর্কে অবগত হলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল হাসান বলেন, ‘কিছু মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। তবে আমরা এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিভাবকরা লিখিতভাবে প্রতিকার চাইলে বিষয়টি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই তার জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
আমার বার্তা/এল/এমই