রাজশাহী মহানগরসহ আশপাশের উপজেলাগুলো গত কয়েক দিন ধরেই সূর্যের প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে। এতে করে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রচণ্ড গরমে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি খেটে-খাওয়া দিন-মজুরদের কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করাটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
টানা তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে শিশু ও বয়স্করা। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহীর বিভিন্ন হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেড়েই চলছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডগুলোতে রোগী তুলনামূলক বেড়েছে।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, সর্দি, জ্বর ও কাশি নিয়ে হাসপাতালে যে সব শিশু ভর্তি হচ্ছে, তাদের বয়স যথাক্রমে ৬ মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ও বয়স্ক মানুষের বয়স যথাক্রমে ৫০ বছর থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মিম নামের এক শিশুর মা বলেন, গত ২দিন আগে হঠাৎ করেই আমার মেয়ের মাথাসহ সারা শরীর গরম হয়ে যায়। দুই দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও সুস্থ না হয়ে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে, আমি ভয় পেয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন আমার মেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েছে।
আরেক শিশু ফরিদার মা বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে আমার মেয়ের হঠাৎ করেই জ্বর শুরু হয়। ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়ানোর পরেও সুস্থ না হলে, দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। বর্তমানে সে সুস্থ আছে।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর আত্মীয় জানান, গত কয়েকদিন ধরেই আমার চাচার শরীর প্রচণ্ড গরম ছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই তার ডায়রিয়া শুরু হয়। ডায়রিয়া হওয়ার পর স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ওষুধ খাওয়ানো হলেও সুস্থ না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও চাচার চিকিৎসা চলছে।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান খান বাদশা বয়স্ক মানুষসহ সব বয়সী মানুষের গরমে অসুখ থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে বলেন, রোদে বের না হয়ে মৌসুমি ফল বেশি খাওয়া, বিশুদ্ধ পানি বেশি বেশি পান করা ও বাইরের খাবার না খাওয়া। এ সকল বিষয় মেনে চললে, অসুখের হাত থেকে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকা যাবে।
রামেক হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ গরমের সময়ে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হলে করণীয় সম্পর্কে বলেন, গরমের মধ্যে শিশুকে বাইরে রোদের মধ্যে নিয়ে বের না হওয়া, বিশুদ্ধ পানি পান করা, মায়ের বুকের দুধ বেশি খাওয়ানো ও বাইরের খাবার না খাওয়া। তাহলে শিশুদের রোগ বালাই কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশু সুরক্ষিত ও ভালো থাকবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সংকর কুমার বিশ্বাস বাসস’কে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্দি-জ্বর ও কাশি নিয়ে এবং গরমজনিত রোগের উপসর্গ নিয়ে ৩৩ জন বয়স্ক মানুষ ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে ২২ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। শিশুরা বিভিন্ন অসুখ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ঈদ পরবর্তী সময়ে এসব উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে, গতকাল শনিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আমার বার্তা/এল/এমই