বিগত ১৬ বছর বিদেশি অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের নায়েক পাড়া এলাকায় শহীদ সাগর ইসলামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এনসিপির এ মুখ্য সংগঠক দেশবাসীকে পহেলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৬ বছর দেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে দলীয় প্রভাবের পাশাপাশি বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব ছিল। তাদের মতো করে দলের ও বিদেশি রাষ্ট্রের এজেন্সির কনসেপ্টে এই নববর্ষগুলোর সেগমেন্ট তৈরি করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, এই যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমতার জায়গা থেকে কোনকিছু চাপিয়ে দেওয়া এটি কখনোই টেকসই নয়। এটি আমরা প্রত্যাশাও করি না। আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার সেই জায়গাটা করে দিয়েছে জনগণকে। আমি বিশ্বাস করি, যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তারা যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, জনগণের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার সাহস না করে।
সারজিস আলম বলেন, দেশের ৫৩ থেকে ৫৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। ফিলিস্তিনের মজলুমদের পাশে দাঁড়াতে কোনো ব্যানার নিয়ে নয়, দলমত নির্বিশেষে সবাই পাশে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ ইউনিসেফ মানবাধিকারের বড় বড় লেকচার দেয়। কিন্তু গাজায় সেটা তারা করেনি। জাতিসংঘ এবং ইউনিসেফসহ সকল মানবাধিকারের চোখ বিবেক গাজায় গিয়ে তালাবদ্ধ হয়ে যায়, সেখানে সকল মানবাধিকার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। আগামীর পৃথিবীতে মানবাধিকারের বয়ান দেওয়ার আগে গাজার চিত্র সামনে আনতে হবে। সেই জায়গায় যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে পুরো পৃথিবীর মানুষের সামনে মানবাধিকার নিয়ে জ্ঞান দেওয়ার মতো মুখ আপনার নাই। ওই মুখে আপনি তালা দিয়ে রাখুন।
তিনি বলেন, গাজায় গণহত্যার রক্তের দাগ নেতানিয়াহুর হাতে আছে। এই নেতানিয়াহুকে যারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন তাদের প্রত্যেকের গায়ে রক্ত লেগে আছে। আমি পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে আহ্বান জানাই, নিজ নিজ অবস্থান থেকে গাজার ভাইদের জন্য কথা বলা শুরু করেন। আমাদের অবস্থান থেকে স্পষ্ট ঘোষণা গাজায় যে গণহত্যা চলছে এটা যদি ঘটতে দেওয়া হয়, এটা শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটা একদিন পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে। এই গণহত্যা মুসলিম কেন্দ্রীক নয়, কারণ গাজায় গণহত্যাকারীরা এমন রক্তপিপাসু যে, তাদের যদি কোনো দিন স্বার্থের প্রয়োজন হয় তারা অন্য ধর্মের মানুষেরও রক্ত নেবে। গাজায় গণহত্যা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, জাতির মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়, এই গণহত্যা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেও নয়। গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে সারজিস আলম বলেন, পুরো বাংলাদেশ তথা পুরো পৃথিবী আপনাদের সঙ্গে আছে। গাজার ভাইদের যে লড়াই, এই লড়াই পুরো পৃথিবীকে সাহসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য শক্তি জোগায়।
এ সময় চাকলাহাট ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, শহীদ সাগরের বাবা রবিউল ইসলাম, নাগরিক পার্টির পঞ্চগড়ের সংগঠক তানভিরুল বারী নয়ন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সারজিস শহীদ সাগরের স্মৃতিফলক পরিদর্শন করে তার মা সখিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলে পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
আমার বার্তা/এমই