বিসিবিকে ঢাকার ক্লাবগুলোর ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে না খেলার হুমকি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক কমিটির প্রাথমিক প্রস্তাবনায় ঢাকার ক্লাবগুলোর পরিচালক ও কাউন্সিলর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমানো হয়েছে। গণমাধ্যম এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে বিষয়টি জানতে পেরে ঢাকার ক্লাবগুলো আজ এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এর জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দেশের ক্রিকেট এখন মিরপুর নির্ভর হলেও অনেক ক্লাবই মতিঝিল-গোপীবাগ কেন্দ্রিক। তাই ঢাকার ক্লাবগুলো আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংলগ্ন এক হোটেলে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে প্রিমিয়ার থেকে তৃতীয় বিভাগ পর্যন্ত ৬৭ ক্লাবের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল।

সেই মতবিনিময় সভা শেষে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্লাব সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ঢাকার সকল ক্লাবের পক্ষ থেকে বিসিবিকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলাম। এই সময়ের মধ্যে তারা যদি এই সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা শনিবার বোর্ড সভাপতির সঙ্গে বসব। সেখানেও কোনো সমাধান না হলে ঢাকার ক্লাবগুলো খেলায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকব।’

লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ রুবেল মতবিনিময় সভায় না খেলার হুমকি দিয়ে মন্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে রুবেলের মন্তব্যই সিদ্ধান্ত আকারে ঘোষণা দেন রফিকুল ইসলাম বাবু। সভায় উপস্থিত থাকা লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জের কর্ণধার লুৎফর রহমান বাদল বলেন, ‘আপনারা জানেন আমার মামলা ছিল। দেশের বাইরেও ছিলাম। এরপরও ক্রিকেট দল গড়েছি। ঢাকার সকল পর্যায়ের ক্লাবগুলো বছরে ১০০ কোটি টাকা খরচ করে। এর বিপরীতে এই প্রস্তাবনা রীতিমতো আমাদের জন্য অপমান। আমাদের এই দাবি পূরণ না হলে আমরা প্রিমিয়ার লিগে কোনো খেলোয়াড়দের সঙ্গে দলবদল নিয়ে কথা বলব না। আমরা কার্যক্রম স্থগিত রাখব।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালক সংখ্যা ২৫। ঢাকার ক্লাবগুলো থেকে ১২ জন, জেলা-বিভাগীয় পর্যায় থেকে ১০, সাবেক ক্রিকেটার কোটা থেকে এক ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে ২ জন মিলে গঠিত হয় পরিচালনা পর্ষদ। গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রাথমিক খসড়ায় ঢাকার ক্লাবগুলোর মধ্যে পরিচালক সংখ্যা ১২ থেকে চার এবং কাউন্সিলর সংখ্যা ৭৬ থেকে কমিয়ে মাত্র ৩০ (প্রিমিয়ার ১২, প্রথম বিভাগ ৮, দ্বিতীয় বিভাগ ৬ ও তৃতীয় বিভাগ ৪ ) করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট কমিটি সিসিডিএমের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান মাসুদুজজামানও উপস্থিত ছিলেন আজকের মত বিনিময় সভায়। বিসিবির পদে থেকেও তিনি ক্লাবগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, ‘সিসিডিএমের পদের আগে আমি একজন ক্লাবের কাউন্সিলর ও ক্লাব সংগঠক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল ভিত্তি ক্লাব। ক্রিকেটের অবদানে যেখানে পরিচালক সংখ্যা ১২ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ হওয়া উচিত সেখানে তারা কমিয়ে মাত্র ৪ করছে এবং কাউন্সিলরশীপও কমিয়ে রাখছে যেটা আসলেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিসিবি’র সাবেক পরিচালক জিএস হাসান তামিম গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সিসিডিএমের পালস হয়তো তারা বুঝেনি। হেলাফেলাভাবে দেখা উচিত হয়নি। এটা না করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ ঢাকার ক্লাবের পরিচালক সংখ্যা কমিয়ে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে পরিচালক সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। এই বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি রয়েছে ঢাকার ক্লাবগুলোর। তারা গত ১৫-১৬ বছরে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেটের উন্নয়ন সেভাবে দেখেননি। তাই জেলা পর্যায়ে পরিচালক সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা পান না এই সংগঠকরা।

বিসিবি গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির আহ্বায়ক বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব সাইফুল ইসলামসহ আরও তিন আইনজীবী এই কমিটির সদস্য। এই কমিটি পরিবর্তন নিয়েও দাবি তুলেছেন ক্লাব সংগঠকরা, ‘এই কমিটিতে ক্রিকেটের স্টেকহোল্ডাররা নেই। ক্রিকেটের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন এবং সংশোধনের প্রক্রিয়া হওয়া উচিত।’

সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি অত্যন্ত ক্রিকেট জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক হয়ে বেশ বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন। বিসিবির সাবেক পরিচালক আলী আহসান বাবু বলেন,‘সে ক্রিকেট কোচ হিসেবে অনন্য কিন্তু সংগঠক হিসেবে এখনো সেই পর্যায়ে যাননি।’

লালমাটিয়া ক্লাবের দীপন এক দশকের বেশি সময় দেশের বাইরে ছিলেন। সম্প্রতি আবার দেশে ফিরেছে এই ক্রীড়া সংগঠক। তিনি নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে কড়া হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, ‘তাকে ক্রিকেট ছাড়তে হবে। বোর্ড সভাপতি ও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে বিষয়টি দেখতে হবে।’ একই সুরে রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘ঢাকার ক্লাবগুলোর অধিকার হরণ হলে তো ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিনই হবে।’ সৈয়দ বোরহান হোসেন পাপ্পুর সঞ্চালনায় ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার বক্তব্য রাখেন।

বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক কমিটি এখনো পরিচালনা পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেনি। কমিটি প্রতিবেদন পেশের পর বোর্ড সভায় অনুমোদন হলে এরপর বিশেষ সাধারণ সভায় কাউন্সিলদের অনুমোদন হলে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন হবে। অনেক ধাপ এখনো বাকি থাকলেও প্রক্রিয়ার শুরুতে নিজেদের অধিকার হরণের আঁচ পাওয়ায় ঢাকার ক্লাব সংগঠকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে।


আমার বার্তা/এমই