অভিষিক্ত জাঙ্গুর দাপুটে সেঞ্চুরিতে হোয়াইটওয়াশড বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন
সৌম্য সরকার-মেহেদী হাসান মিরাজ গড়ে দিয়েছিলেন ভীত। তার ওপর দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলী খেলেন অসাধারণ ইনিংস। তাদের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ স্কোর বোর্ডে তুলেছিল এ বছরে নিজেদের সর্বোচ্চ রান। এদিকে বল হাতে টাইগারদের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। সব মিলিয়ে জয়ই উঁকি দিয়েছিল সফরকারী শিবিরে। তবে অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর সেঞ্চুরি এবং কেসি কার্টি ও গুডাকেশ মোটিদের ঝড়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে হেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টাইগারদের পেতে হয়েছে হোয়াইটওয়াশের তেতো স্বাদ।
বৃহস্পতিবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর অভিযানে ব্যাট হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে নিজেদের রেকর্ড ৩২১ রান করে বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর সেঞ্চুরি এবং কেসি কার্টি ও গুডাকেশ মোটিদের ঝড়ে যথেষ্ট হয়নি তা। ২৫ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৯৫ রানের লক্ষ্য সফলভাবে তাড়া করে রেকর্ড গড়েছিল তারা। এবার সেটিই নতুন করে লিখেছে স্বাগতিকরা।
শেষ ম্যাচে ৪ উইকেটের জয়ে দশ বছর পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগের দুই সিরিজেই ক্যারিবিয়ানদের কোনো ম্যাচ জিততে দেয়নি বাংলাদেশ। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল টাইগাররা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন জাঙ্গু। দল জেতানো ১০৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছিল বিবর্ন। দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমেদের বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৪ রান নেওয়ার পর আলিক আথানেজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন ব্র্যান্ডন কিং। নাসুমের পরের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন আথানেজ। পঞ্চম ওভারে শেই হোপকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেন হাসান মাহমুদ। মাত্র ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দ্রুত সেই ধাক্কা সামলে নেয় স্বাগতিকরা। চতুর্থ উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়েন কার্টি ও শেরফেইন রাদারফোর্ড। দলকে একশর কাছে নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ৩৩ বলে ৩০ রান করা রাদারফোর্ড। তিন ম্যাচে ১৬৭ রান করে তিনিই পরে পান সিরিজ সেরার পুরস্কার। এরপর অভিষিক্ত জাঙ্গুকে নিয়ে এগোতে থাকেন কার্টি। দুজনের জুটি পঞ্চাশ পূর্ণ করার পর নাসুমের বলে আম্পায়ার্স কলের সৌজন্যে বেঁচে যান তিনি। এর বাইরে বাংলাদেশের বোলারদের তেমন কোনো সুযোগই দেননি দুই ব্যাটসম্যান। কার্টি ফিফটি করেন ৪৮ বলে। আর অভিষেকে পঞ্চাশ ছুঁতে জাঙ্গু খেলেন ৪৫ বল।
৩৪তম ওভারে রিশাদ হোসেনের বলে মিড অফ ও লং অফের মাঝামাঝি জায়গায় ৬১ রানে থাকা জাঙ্গুর ক্যাচ ছেড়ে দেন বদলি ফিল্ডার পারভেজ হোসেন। তবে পরের বলেই সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন ৯৫ রান করা কার্টি। তাই তখন জাঙ্গুর ওই ক্যাচ মিস তেমন বড় মনে হচ্ছিল না। কার্টির বিদায়ে ভাঙে ১১৫ বলে ১৩২ রানের জুটি।
ক্রিজে গিয়ে রোস্টন চেইস ঠিক ছন্দ খুঁজে নিতে পারেননি। ১২ রান করতে তিনি খেলেন ১৯ বল। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকেও ফেরান রিশাদ। চার ওভারের মধ্যে দুই উইকেট নিয়ে তখন ম্যাচে ফেরার আশায় বাংলাদেশ। কিন্তু জাঙ্গুর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাত্র ৫৩ বলে ৯১ রান যোগ করে দলের সহজ জয় নিশ্চিত করে দেন মোটি। আফিফ হোসেনের বলে লং দিয়ে ছক্কা মেরে মাত্র ৭৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাঙ্গু। পরের ওভারে রিশাদের বল জোড়া ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচ শেষ করেন মোটি।
৮৩ বলের ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন জাঙ্গু। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোটি।
ম্যাচের প্রথমভাগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই জীবন পান সৌম্য। আলজারি জোসেফের বলে স্লিপে ক্যাচ ছেড়ে দেন ব্র্যান্ডন কিং। তবে ভাগ্য অতটা সুপ্রসন্ন ছিল না তানজিদ হাসান, লিটন কুমার দাসের। জোসেফের পরের ওভারে তিন বলের মধ্যে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন দুজন। চাপ সামাল দিতে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন মিরাজ। তার কাজ সহজ করে দেন জেডিয়া ব্লেডস। এলোমেলো বোলিংয়ে প্রতি ওভারে বাউন্ডারি হজম করতে থাকেন অভিষিক্ত পেসার। সুযোগ কাজে লাগিয়ে রানের চাকা ঠিক রাখেন মিরাজ।
এদিকে শুরুর জড়তা কাটিয়ে সময় উপযোগি ব্যাটিং করেন সৌম্য সরকার। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকেন তিনি। সে পথ ধরে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৫৮ বলে হাফেসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন সৌম্য। একই ওভারে পঞ্চাশে পা রাখা মিরাজ ৫৬ বল খেলে।
দলকে দেড়শর কাছে রেখে বিদায় নেন সৌম্য। রিভিউ নিয়েও কোনো ফায়দা হয়নি তার। তার বিদায়ে ভাঙে ১২৭ বলে ১৩৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ৭৩ বলে ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন বাঁহাতি সৌম্য। এরপর কিছুটা কমে রানের গতি। পাঁচ নম্বরে নেমে সাবলীল ব্যাটিং করতে পারেননি আফিফ হোসেন। ১৫ রান করতে ২৯ বল খেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ের আগের ওভারে রান আউটে কাটা পড়েন মিরাজ।
চলতি সিরিজে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৭৭ রান করেন মিরাজ। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ বলের ইনিংস সাজান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ছন্দ খুঁজে পেতে কিছুটা সময় নেন ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়া মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। তবে শেষ দশ ওভারে ঝড় তুলে ১০৪ রান যোগ করেন তারা।মোটির বলে ছক্কা মেরে বাংলাদেশের দুইশ পূর্ণ করার পাশাপাশি ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ২৪০ ইনিংসে তামিম ইকবালের করা ১০৩ ছক্কার রেকর্ড টপকে যেতে তার লাগে ২০৮ ইনিংস।
ইনিংসের শেষ ৪ ওভারে মাহমুদউল্লাহ ও জাকের মিলে নেন ৫৯ রান। এরফলে ৩২১ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ। তবে এ রানও জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি সফরকারীদের। আর তাই হোয়াইটওয়াশের তোতো স্বাদ নিয়েই তাদের ছাড়তে হয় মাঠ।
বাংলাদেশ সময় আগামী সোমবার ভোরে সেন্ট ভিনসেন্টে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২১/৫ (তানজিদ ০, সৌম্য ৭৩, লিটন ০, মিরাজ ৭৭, আফিফ ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৮৪*, জাকের ৬২*; জোসেফ ১০-১-৪৩-২, ব্লেডস ৬-০-৭৩-০, শেফার্ড ১০-১-৬৫-০, চেইস ৮-১-৩৮-০, মোটি ১০-০-৬৪-১, রাদারফোর্ড ৬-১-৩৭-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৫.৫ ওভারে ৩২৫/৬ (কিং ১৫, আথানেজ ৭, কার্টি ৯৫, হোপ ৩, রাদারফোর্ড ৩০, জাঙ্গু ১০৪*, চেইস ১২, মোটি ৪৪*; হাসান ৮-০-৫২-১, নাসুম ৭-০-৫৬-১, মিরাজ মিরাজ ১০-০-৬৭-০, তাসকিন ৯-০-৪৯-১, রিশাদ ৮.৫-০-৬৯-২, আফিফ ২-০-১৯-০, সৌম্য ১-০-৬-০)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০তে জয়ী
ম্যাচসেরা: আমির জাঙ্গু
সিরিজ সেরা: শেরফেইন রাদারফোর্ড