টিকেট সিন্ডিকেট চক্রের ষড়যন্ত্রের জালে আটাব
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ০৯:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
বশির হোসেন খান:

- অর্ধ কোটি টাকায় কমিটি ভাঙতে সক্রিয় চক্র
- সিন্ডিকেটের চাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
- আটাব কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
- নির্ধাতির সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা
- ৩০ ট্রাভেল এজেন্সির সিন্ডিকেট
- টিকিটের মূল্য আবারও দ্বিগুন করার পায়তারা
টিকেটের উচ্চমূল্য, সিন্ডিকেট, মজুতদারি, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যা সমাধানকল্পে কাজ করছে এসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্টস অফ বাংলাদেশ(আটাব)। আটাবের বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে তারা। তবে আটাবের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল পূর্বক প্রশাসক নিয়োগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল রবিবার সকালে আটাব সভাপতি, মহাসচিব লিখিত ভাবে নোটিশের এ জবাব দেন।
সূত্র বলছে, এয়ার টিকেট নিয়ে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাজ করছে আটাব। যেকারনে আটাবকে কোন ঠাসা করতে এবং তাদের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে চক্রটি। আটাবের কমিটি ভেঙে দিতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। গত মঙ্গলবার জারিকৃত এক অফিস আদেশে বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা অনুসারে আটাবে প্রশাসক নিয়োগ কেন করা হবে না, তা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জবাবদিতে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব তাহসিনা বেগম। এর আগে, গত মার্চ মাসে আটাবের বর্তমান কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের দাবি তোলে ‘আটাব সংস্কার পরিষদ’।
আটাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গত বছরের ৫ মার্চ নির্বাচিত হওয়ার পর টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ করা, অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি উচ্ছেদ, বিদেশী অবৈধ এজেন্সির পোর্টাল বন্ধকরণ, শ্রমিক যাত্রীর জন্য লেবার ফেয়ার চালুকরণ, বিমানের টিকেটিং অথরিটির জন্য অতিরিক্ত ব্যাংক গ্যারান্টি ২৫ লাখ থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করাসহ সদস্য বান্ধব অসংখ্য কাজ করেছে বর্তমান কমিটি। ট্রাভেল ট্রেড সেক্টরে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান প্রচেষ্টায় সরকারের সঙ্গে আলোচনা, মতামত ও সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টিকেটের উচ্চ মূল্য ও মজুতদারির বিষয়টিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং গত ১১ ফেব্রুয়ারি ”আকাশ পথের যাত্রীসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণে এয়ার টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্য রোধকল্পে নির্দেশনা” শীর্ষক একটি পরিপত্র জারি করে প্রশংসিত হয়েছেন সর্বমহলে। পরিপত্র জারীর পর টিকেট এর মূল্য অর্ধেক পরিমাণ কমে আসে।
সরকারের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায় ৩০ টি ট্রাভেল এজেন্সির সিন্ডিকেট ও মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে জিএসএ গ্যালাক্সি গ্রুপ অব কোম্পানী যার আওতাধীন প্রায় ৭-৮ টি এয়ারলাইন্সের টিকেট তারা নামবিহীন ব্লক করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরীর মাধ্যমে এই সকল এজেন্সির কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করত। এই সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বাজারে সিন্ডিকেট ও মনোপলি করে কয়েক শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমান কমিটি এই সিন্ডিকেট চক্র বন্ধে সরকারের সাথে সমন্বয় করে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আটাবের কর্মকান্ডে ক্ষুদ্ধ হয়ে সিন্ডিকেট চক্র আটাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জাল বুনছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেন।
তারা বর্তমান আটাব কমিটি বাতিল করার জন্য সংবাদ মাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। আবার অনেকই মনগড়া ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করছেন। তাদের এই চক্রান্ত সফল হলে সক্রিয় হবে সিন্ডিকেট চক্র। টিকিটের মূল্য আবারও বাড়ছে দ্বিগুণ।
এ বিষয়ে আটাবের মহাসচিব ও সায়মন ওভারসিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহ বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে টিকেট সিন্ডিকেট নিয়ে আমরা কাজ করছি। এরপর থেকে এয়ার টিকেটের বিষয়ে সরকার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে টিকেটের দাম কমছে। টিকেট সিন্ডিকেট এখন আটাবের কমিটি বাতিলের জন্য চেষ্টা করছে। আমাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যদি থাকত, তাহলে ৫ আগস্টে পালিয়ে যেতাম। কিছু এয়ারলাইন্স এজেন্সি এখনও সরকারের পরিপত্রটি মানতে পারছে না তাই বিভিন্ন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
আমার বার্তা/এমই