ডিএসসিসি’র বর্জ্র্যে থামেনি জুলুমবাাজি

কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ | অনলাইন সংস্করণ

  কামরুজ্জামান মিল্টন :

  •  জুলুমবাজির ধান্ধাবাজিতে এখনো মেয়রের দোসর
  • প্রকাশিত সংবাদে ভোল পাল্টে নতুন তকমায় সক্রিয়তার চেষ্টা
  • সুবিধার আস্কারাদাতা নিয়ে নতুন সিণ্ডিকেট ও ভুক্তভোগীদের হুমকি-ধমকি  


‘ঢাকা দক্ষিন সিটিকর্পোরেশন(ডিএসসিসি)’র বর্জ্র্যে থামেনি জুলুমবাজের তান্ডব,কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ’-শিরোনামে গত ৩ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশিতের পর সংশ্লিষ্ট বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ ওই সিণ্ডিকেটটি খানিকটা নড়েচড়ে বসেছে। তবে সাবেক ক্ষমতার তকমা ছুড়ে ফেলে নতুন তকমা ধারন,কতিপয় কথিত সংবাদকর্মী ও স্থানীয় কতিপয় খোয়াবি দাপটির (নেতা) আস্কারায় গা ছাড়াভাবে ভুক্তভোগীদের উপর ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রটি আরো জানায়,সাধারনত দিনের প্রথম ভাগে হোতাসহ পরিচ্ছন্নকর্মীদের (বর্জ্র্য খালাশকারী) ওয়ার্ড ভিত্তিক সরদার নামধারী দালালদের অফিসে আনাগোনা খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু ওই দিনের ওই প্রতিবেদন ঘিরে দেখা যায়,হোতা মানে-বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবু তাহেরসহ সিণ্ডিকেটের লোকজনের মধ্যে দৌড়ঝাপ। আর নারীদের নিয়োমিত আড্ডার নিরাপদ আস্তানা ওই চেম্বারটিও হয়ে যায় শুনশান নিরব। কিন্তু তার এক-দু দিনের মাথায় ওই সব সংবাদকর্মী ও খোয়াবি দাপটিদের সহয়তায় অজ্ঞাত কোন শক্তির ছোয়ায় শঙ্কার দৌড় থামে ওই সিণ্ডিকেটের। সেই সাথে দেয়া হয়-এ সংবাদের তথ্য ফাশে সন্দেহজনক হুমকিও ।   

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,দীর্ঘদিন ধরে ডিএসসিসি’র অঞ্চল-২’র বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্বতনরা (কর্মকর্তা-কর্মচারীরা) যেন কতিপয় উর্ধ্বতনের হীনস্বার্থ সিদ্ধির বেড়াজালে নির্বিকারে আটকে আছে। একটা লম্বা সময়ে ধরে উর্ধ্বতনের অধ্বতনদের (বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক) উদ্দেশ্যমূলক হয়রানির জালে আটকে ঘুষ আদায় ও বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের নায্য পারিশ্রমিক কর্তন,নানা অজুহাতে দমন-পীড়নসহ হরেক ধান্ধাবাজির দোলাচলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বরাবরেরই। তবে সাম্প্রতিক সামগ্রিক অবস্থার রকম ফেরেও তা নিরবে বহাল থাকায়ই এ বাড়ন্ত ক্ষোভের আনাগোনা।

আরো জানা গেছে,ওই সময় ধরে প্রকাশ্য ওই ধান্ধাবাজির জুলুমবাজির শিকার বিপুল সংখ্যক বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনেকে বরাবরই নানাভাবে রেহাই খুঁজলেও মেলেনি রেহাই। শুধু ঘটেছে-লোক দেখানোর টুকটাক রদবদল। শুধুই এক জুলমবাজের বদলে এসেছে-আরেক জুলমবাজ। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও বহাল রয়েছেন তাদেরই অন্যতম একজন। তিনি (ডিএসসিসি)’র (অঞ্চল-২) একজন পুরনো ধুরন্ধর অধ্বতন হলেও প্রায় বছর দেড়েকের মত ক্ষমতাধর উর্ধ্বতনের ওই মক্ষম ধান্ধার চেয়ারটি পেতে বসে আছেন। পদমর্যাদায় ‘সিও’ (প্রধান বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা)।  নাম তার-আবু তাহের। তিনি এর আগে এ জোনেরই সিআই (বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক) থেকে পদন্নোতি পেয়েছেন। আর তারপর থেকে শুরু হয়েছে তার ‘সিও’ গিরি, মানে-ওই ধান্ধাবাজির জুলুমবাজি। সাবেক মেয়র তাপসের কাছের লোক বলে পরিচিত ‘সিও’ আবু তাহের পছন্দসই সিন্ডিকেট করে এ যাবৎ নির্বিঘ্নে ১৩ টি ওয়ার্ডের ১৩ জনের বেশী পরিদর্শক ও প্রায় পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপর জুলুমবাজির ঘুষবাজি চালিয়ে টাকার পাহাড় গড়তে মরিয়া ছিলেন। সাম্প্রতিক অবস্থায় খানিকটা নড়েচড়ে বসে ফের সাবেক কায়দায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। চলছে তার-গতানুগতিক ধান্ধাবাজির জুলুমবাজি। আর তাতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা সুযোগ বুঝে প্রতিকারের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। অতিষ্ঠরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ সেনাবাহিনীর কাছে পর্যন্ত অভিযোগও করেছেন।

আরো জানা গেছে,আবু তাহের সিআই থেকে ‘সিও’ হয়েই বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শকদের নানা অজুহাতে ফাঁদে ফেলে ঘুষ আদায় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হুমকি-ধমকির মুখে বেতন কর্তনসহ কর্মী খাটানোর হেরফের বাণিজ্যে বেপরোয়া ছিলেন। আর এভাবে প্রায় বছর খানেকের বেশী সময় ধরে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে উর্ধ্বতন কতিপয় ঘুষবাজের মন জুগিয়ে ছিলেন নিরাপদে। তবে ৫ই আগস্টের পর কিছুদিন নিস্ক্রিয়ও থাকেন। কিন্তু সদ্য ফের হয়ে উঠেছেন তৎপর । আর তাতে ফুঁসে উঠছে ভুক্তভোগীরা।

আর এব্যাপারে খোঁজ নিতে খিলগাঁও এলাকার ২’নং ওয়ার্ডের ভুইয়া ঝিলের ময়লার বাগাড়ে গিয়ে দেখা মেলে বেশ কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। সেই সাথে ওই সিইও আবু তাহেরের নিযুক্ত শফিক নামের জনৈক সরদার। ‘সিও’ আবু তাহেরের সব ধান্ধাবাজির অপকর্মের দোসর শফিক পরিস্থিতি বুঝে সটকে পড়লেও পরিচয় গোপন রেখে কথা হয়-তাদের কয়েকজনের সাথে। কথোপথনে বেরিয়ে আসে-ওই সিও’র নানা ধান্ধাময় অপকর্মের ফিরিস্তি। বেরিয়ে আসে-বেতনের একটি অংশ ঘুষ দিয়ে কাজ না করেও বেতন নেয়ার প্রচলিত নিয়মের কথা। সেই সাথে একটা বড় সংখ্যক লোকের কাজের বোঝা সীমিত সংখ্যক লোকের (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) ওপর চাপিয়ে দেয়া। চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে নির্বিকারে এ নিয়মেই চলে-বাগাড় খালাশের কাজসহ অন্যান্য কাজের বিলের টাকা আত্মসাৎ। তবে এখানেই শেষ নয়। মাস শেষে তাদের বেতনের ওপর থেকেও নির্দিষ্ট একটা অংশ ওই সব বড় সারদের জন্য আদায়ও যেন বরাবরের রেওয়াজ। আর প্রতি ওয়ার্ডের ন্যায় সেখানে এ দায়িত্ব পালনে রয়েছেন-সিও স্যারের কাছের লোক বলে পরিচিত ওই শফিক ওরফে সরদার শফিক। 

জনৈক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ক্ষোভের সাথে জানান,গরিবের রক্ত চুষে খাওয়াই বড় লোকের কাম। আমরা খাইটা মরি, আর সাবেরা (সিও ,আইসি) বসে বসে কাম না করনের বেতনের ভাগও খায়,আবার কাম করেও চাকরি বাঁচাতে,বদলি ঠেকাতে এ কষ্টের টেকাও পুরোটা খাওন যায় না। মাস শেষে একটা টেকা দেওনই লাগে। আর ওই টেকা ভাগাভাগি করে তারা বাড়ি,গাড়ি করে। বিদেশে ঘুরে। 

একই ভাবে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরে একই ধরনের অভিযোগ মিলে ওই ক্ষমতার ‘সিও’ আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। সেই সাথে একাধিক ওয়ার্ডের একাধিক বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শকের সাথে কথায় কথায় বেরিয়ে আসে-বরাবরের রেওয়াজ ভিত্তিক ওই ‘সিও’ আবু তাহেরের বদলি,শাস্তি ও জনবল কারসাজি বাণিজ্যের বেপরোয়া ধান্ধাবাজির নানা দিক। আর এভাবেই তিনি নামে-বেনামে গড়েছেনবিত্তবৈভবের মালিক। এখনো রয়েছেন-সক্রিয়। 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনৈক পরিদর্শক জানান,প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যাই হোক, মাল কামানোর জন্য এ বিভাগের মক্ষম ‘সিও’। যেটিতে আছেন-আবু তাহের সাব। তাছাড়া তিনি এর আগেও পরিদর্শক থেকেও সুযোগমত কামিয়ে নিয়েছেন ঢের। এরপরও পদন্নোতি। তার মানে-সোনায় সোহাগা। একটু এদিক সেদিক হলেই বদলি, আবার স্বেচ্ছায় বদলি আর শাস্তির বদলি তো আছেই। তাছাড়া উনি ম্যানেজের মাস্টার। উর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে গত এক বছরে যা কামিয়েছেন, তার হিসাব চুকানোই কষ্ট। দেশে তো আছেই,বিদেশে সম্পদ করেছেন। তারপরও থামেননি। অভিযোগেরও শেষ নেই তার বিরুদ্ধে। তারপরও এখনো তিনি চলছেন-গতানুগতিক ভাবে । 

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ‘সিও’ (বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা) আবু তাহেরের সাথে মোবাইলে কথা হয়। তবে তিনি এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। সেই সাথে অভিযোগের বিষয়ে জানালে তিনি সমাধানেরও আশ্বাস দেন। 

আর মহাক্ষমতার ‘সিও’আবু তাহেরের অর্জিত স্তুপাকৃত অবৈধ সম্পদের নমুনার আগে-নির্বিঘ্নে এযাবৎ কাড়ি কাড়ি টাকার মোহে অন্ধ হয়ে যে সব অবৈধ কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠ করে অসংখ্য অধ্বতন (কর্মকর্তা ও কর্মচারী)’র রক্ত চুষে এখনো বলবদ রয়েছেন,আর এ প্রতিবেদনে সে টুকুই দেখানোর প্রয়াস। 

 

আমার বার্তা/এমই