গীবত: নীরব ঘাতক সমাজের অন্তরে

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ১৬:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

আজকের সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম প্রকাশ হচ্ছে গীবত বা পরচর্চা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সবখানেই একে এক প্রকার স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। অথচ ইসলামে গীবতের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

গীবত সম্পর্কে মানুষ প্রায়ই উদাসীন থাকে। একে সাধারণ আলাপচারিতার অংশ হিসেবে গণ্য করে। এর দুটি প্রধান কারণ রয়েছে এক, অনেকেই জানেন না গীবত আসলে কী; দুই, জানলেও এর গুরুত্ব দেন না। অথচ আল্লাহ তায়ালা গীবতের তুলনা করেছেন মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণের সঙ্গে, যা শুনেই গা শিউরে ওঠে।

কুরআনের সুরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা এটিকে ঘৃণা করো। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।”

রাসুলুল্লাহ (সা.) গীবতের প্রকৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে “তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যা সে শুনলে কষ্ট পাবে এটাই গীবত। আর যদি তা সত্যও হয়, তবু গীবত; যদি মিথ্যা হয়, তবে তা অপবাদ।” (মুসলিম শরীফ)

হাদিস অনুযায়ী গীবতকারীর শাস্তিও ভয়ংকর। এক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) যখন মেরাজে গমন করেন, তখন দেখতে পান কিছু লোক নিজের চেহারা ও বক্ষ তামার নখ দিয়ে খামচাচ্ছে। এরা সেইসব ব্যক্তি যারা দুনিয়ায় গীবতের মাধ্যমে মানুষের সম্মানহানি করেছে।

ইসলামে গীবতের কাফফারা নির্ধারিত রয়েছে। যদি গীবত করা ব্যক্তি তা জানতে পারেন, তবে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যদি না জানেন বা তিনি মারা গেছেন, তবে তার জন্য তওবা ও ইসতিগফার করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গীবত সমাজে এক ভয়ংকর ব্যাধির রূপ নিয়েছে। এটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে, দোষারোপের সংস্কৃতি তৈরি করে এবং ঈমান দুর্বল করে ফেলে। তাই আজ আমাদের উচিত নিজেকে সংশোধন করা, অপরের দোষ না খুঁজা এবং অন্তর পরিশুদ্ধ রাখা।

আসুন, আমরা সবাই এই ভয়াবহ গুনাহ থেকে বিরত থাকি এবং সমাজে গীবতমুক্ত সংস্কৃতি গড়ে তুলি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের গীবতের মতো জঘন্য অপরাধ থেকে হেফাজত করেন আমিন।