আত্মীয়-স্বজনদের পারস্পরিক যাতায়াত একটি প্রশংসনীয় কাজ

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৫, ১৮:১৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

সারা বছর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয় না। তাই ঈদ আসলে সবাই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া বা তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন।

আর সে জন্যই সবাই পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে যান। এর মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা পায় এবং একে অন্যের দুঃখের অংশীদার হয়। আর এ যেন হয়ে ওঠে আত্মীয়-স্বজনদের এক মিলনমেলা। ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়-স্বজনদের পারস্পরিক যাতায়াত প্রশংসনীয় কাজ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মুমিন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করে, সে এমন মুমিনের তুলনায় অধিক সাওয়াবের অধিকারী হয়, যে জনগণের সঙ্গে মেলামেশা করে না এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্য ধারণ করে না। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৩২)
পারস্পরিক সাক্ষাতের বিধান

ধর্মীয় দৃষ্টিতে আত্মীয়-স্বজনের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ সাধারণত মুস্তাহাব। চাই তারা সুখে থাকুক বা দুঃখে, সুস্থ থাকুক বা অসুস্থ। কেননা মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় কোনো অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন, কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৮)

আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কেন যাবেন

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অপর ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, তার ব্যাপারে একজন ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সুসংবাদ পৌঁছায় যে ‘আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ভালোবেসেছ। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪৩)

সাক্ষাৎ যখন আবশ্যক

কখনো কখনো আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটা আবশ্যক হয়ে যায়। যেমন—

মা-বাবার সাক্ষাৎ

মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, নিয়মিত সাক্ষাৎ করা এবং তাদের খোঁজ-খবর রাখা সন্তানের দায়িত্ব। বিশেষত যখন মা-বাবা বার্ধক্যে উপনীত হন অথবা অক্ষম হয়ে পড়েন।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন...মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)
আত্মীয়তা ছিন্ন হওয়ার ভয় থাকলে

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে, তা রক্ষার জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া আবশ্যক। মহানবী (সা.) বলেন, যখন আল্লাহ সৃষ্টি কাজ সমাধা করার জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ককে বলেন, তুমি কি এতে খুশি নও যে তোমার সঙ্গে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৭)

অসুস্থ হলে

অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া সবার দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা-যত্ন করনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনার সেবা-যত্ন করব, অথচ আপনি জগতগুলোর প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? অথচ তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার সেবা করতে, তবে তার কাছেই আমাকে পেতে?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৯)

বিপদগ্রস্ত হলে বা মারা গেলে

কেউ বিপদগ্রস্ত হলে বা মারা গেলে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যাপারে হাদিসে তাগিদ আছে। মহানবি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে তার বিপদে সান্ত্বনা দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬০১)

বারবার আসা কি দোষের : সম্পর্ক যদি অতি ঘনিষ্ঠ হয়, তবে বারবার আসা দোষের নয়। তবে এত বেশিবার আসা উচিত নয়, যার দ্বারা অন্যের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমাদের ওপর এমন কোনো দিন যায়নি, যে দিনের দুই প্রান্তে সকালে ও বিকেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে আসতেন না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৮৯)

কখন যাবেন

ঈদে সবাই বাড়িতে থাকেন, তাই এই সময়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া ভালো। তবে তাদের বিশ্রাম বা ব্যস্ততার সময় না যাওয়াই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন থাকলে ভিন্ন কথা। আর যাওয়ার আগে অবশ্যই যোগাযোগ করে যাওয়া উচিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে ঘরের অধিবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদের সালাম না দিয়ে প্রবেশ করিও না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৭)

এই সময়ে আত্মীয়ের বাড়ি গেলে সর্বত্র প্রবেশ করা এবং যেখানে সেখানে বসে না পড়া ভালো। বিশেষ করে যেখানে প্রবেশ করা মানুষ অপছন্দ করতে পারে। যেমন শোয়ার ঘর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার বাড়িতে তার বিছানায় বসবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪১৮)

উপহার নেওয়া কি আবশ্যক

কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে উপহার নিয়ে যাওয়া উত্তম এবং মেজবানের জন্য সাধ্যানুযায়ী অতিথির যত্ন করা আবশ্যক। এই ক্ষেত্রে ইসলাম লৌকিকতাকে অপছন্দ করে। তাই অতিথি যেমন সাধ্যের চেয়ে বেশি খরচ করে উপহার কিনবে না, মেজবানও আপ্যায়নে সামর্থ্যের চেয়ে অর্থ খরচ করবে না। বরং উভয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।


আমার বার্তা/এল/এমই