টাইম ম্যাগাজিনে আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবছর বিশ্বের ১০০টি স্থাপনাকে ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস’ হিসাবে ঘোষণা করে থাকে। এ বছর সেই তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ার দরগারপাড় এলাকার জেবুন নেসা মসজিদ।

গত ১৩ মার্চ প্রকাশিত ওই তালিকার প্রতিবেদনে মসজিদটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের স্থপতিরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক মসজিদ ডিজাইন করে আসছেন, কিন্তু ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত এই গোলাপি রঙের স্থাপনাটি তার শিল্প পরিবেশের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় চিত্র তুলে ধরে। ওই এলাকার অনেক টেক্সটাইল কারখানার মধ্যে একটির মালিক তার প্রয়াত মায়ের নামে নামকরণ করা জেবুন নেসা মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন, যা ৬৫০০ পোশাক শ্রমিকের জন্য অবকাশ হিসাবে (নামাজের পাশাপাশি) কাজ করে।’

আশুলিয়ার দরগারপাড় এলাকায় আইডিএস গ্রুপের ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন জেবুন নেসা মসজিদ। চতুর্ভুজ আকৃতির অবকাঠামোর মাঝে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ। প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য পুরো মসজিদের দেওয়ালজুড়ে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র, যা মসজিদটিকে করেছে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। মসজিদের সামনে রয়েছে কাচে ঘেরা একটি সরু লেক। লেকের পানির মাধ্যমে বাতাস প্রাকৃতিকভাবে শীতল হয়ে প্রবেশ করে মসজিদে। এ কারণেই মসজিদটিতে লাগানোর প্রয়োজন হয়নি এসি কিংবা বৈদ্যুতিক পাখা।

ঢাকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্টুডিও মরফোজেনেসিসের অন্যতম পরিচালক সাইকা ইকবাল মেঘনা জেবুন নেসা মসজিদের প্রধান স্থপতি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে পড়াশোনা করেছেন এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায়ও যুক্ত রয়েছেন। মসজিদের জমিদাতা নিজের প্রয়াত মা জেবুন নেসার নামেই এর নামকরণ করেন। একটি ছায়াঘেরা পুকুরের পাড়ে গোলাপি ইটের বুননে দাঁড়িয়ে থাকা অভিনব নকশার এই মসজিদ যে কোনো দর্শকেরই দৃষ্টি কাড়ে। ভেতর-বাইরের পরিবেশ এতই চমৎকার ও প্রাকৃতিক যে, এই এলাকার শ্রমিক, পথচারী ও মুসল্লিদের দুদণ্ড প্রশান্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে মসজিদটি। মসজিদটি সমতল থেকে কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত। বৃষ্টির মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলে যেন তা উপচে পড়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ না করে, সেজন্যই প্রচলিত এই শৈলী গ্রহণ করা হয়েছে। মসজিদটির সামনে রয়েছে স্বচ্ছ পানির কৃত্রিম জলাধার। রয়েছে বড় প্রাকৃতিক পুকুর। প্রশস্ত খোলা খিলান দিয়ে মুসল্লিরা সামনের জলাশয় ও পুকুরটি স্পষ্ট দেখতে পান।

জেবুন নেসা মসজিদ যেন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার এক নিরাপদ আস্তানা। স্থপতিদের ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রেদিং প্যাভিলিয়ন’। মসজিদের চারপাশের দেওয়ালগুলোতে রয়েছে অসংখ্য আয়তাকার ছিদ্র, যা দিয়ে আলো-বাতাস প্রবাহিত হয়। এসব ছিদ্র প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যের আদলে মসজিদের ভেতরে আলোর মায়াজাল বোনে। ছোট ছোট ছিদ্রের মধ্য দিয়ে পরিশোধিত আলোর মিছিল যেন মসজিদের ভেতরে ঝাড়বাতির আবহ তৈরি করে।

প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের জন্য মসজিদের সামনে-পেছনে আধখোলা কাঠামো রয়েছে, যা একই সঙ্গে সূর্যের সরাসরি আলো ও বৃষ্টি থেকে নিস্তার দেয়। ভেতরের কাঠামো গোলাকার হয়ে ওপরে উঠে বিশালাকার অগভীর গম্বুজ তৈরি করেছে। মাঝখানে কোনো স্তম্ভ নেই। গম্বুজের বাইরের চারপাশে কিছুটা ফাঁকা রেখে গড়ে ওঠা হালকা বাঁকানো ছিদ্রযুক্ত চারদেওয়াল মসজিদের নকশাকে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে। মসজিদের সামনে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ।

পূর্বপাশে বাইরে একটি ইস্পাতের সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির ওপরে অর্ধচাঁদ আকারের একটি ফ্লোর তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে সরাসরি নিচতলার ইমাম ও মুসল্লিদের স্থান দেখা যায়। মেজ্জানাইন নামের এই স্থান নারীদের নামাজের জন্য বরাদ্দ।

ইমাম হাফেজ মুফতি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সারাদিন গার্মেন্টে কাজ শেষে বিরতির সময় মসজিদের মনোরম পরিবেশে নামাজ আদায় করলে শ্রমিকদের মন প্রফুল্ল থাকে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এত সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন, যা দৃষ্টান্ত। এখন এই মসজিদের পরিচিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।


আমার বার্তা/এমই