শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পেলেন ১৫ গুণীজন
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মানুষের মনকে করে উদার Ñমো. আবুল বাশার আব্বাসী, লোকসঙ্গীত শিল্পী
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১৯ | অনলাইন সংস্করণ
রতন বালো
লোকসঙ্গীত শিল্পী মো. আবুল বাশার আব্বাসী। বয়স ৫০ পেরিয়ে ৫১ ছুঁই ছুঁই। আট বছর বয়স থেকে তিনি সঙ্গীত জগতে জড়িত। আধ্যাত্মিক লোকসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেই তার পরিচয় ফুটে উঠেছে গ্রামেগঞ্জে। তিনি রেডিও-টেলিভিশনে গান গেয়ে থাকেন। দক্ষিণ মানিকগঞ্জের লেবুবাড়ি ইউনিয়নের হাসলি গ্রামের বিখ্যাত বয়াতি মো. সাইদুর রহমানের বড় ছেলে তিনি। বাউল সম্রাট রহমান বয়াতির সঙ্গীতের উপর হাতেখড়ি।
প্রথমে ১৯৭৮ সালে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে বিশেষ এক অনুষ্ঠানে বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করে বিশেষ সম্মাননা পান আবুল বাশার আব্বাসী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত থেকে সম্মাননা পাওয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে তিনি মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিবিদদের হাত থেকে সম্মাননার ক্রেস্ট পেয়েছেন।
‘শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মানুষের মনকে করে উদার ও কোমল’-বলে সঙ্গীতশিল্পী আবুল বাশার জানান। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এগুলো হৃদয়ে লালন ও চর্চা করে সে কখনো সমাজবিদ্বেষী কাজ করতে পারে না। সাহিত্য বিভিন্ন যুগের ও বিভিন্ন গোত্রের সমাজ সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেয়। বিভিন্ন স্থানের ভাষা শিখতে সহায়তা করে। গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে তিনি এ তথ্য জানান।
এছাড়া তিনি গতকাল সর্বশেষ লোক সংস্কৃতির উপর গুণী শিল্পীর পুরস্কার লাভ করেন। সকাল ১০টায় মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেয় মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি। শুধু আবুল বাশার আব্বাসীই নন, তার মতো গত ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে সৃজনশীল বাংলাদেশের উপর বিশেষ অবদানের জন্য ১৫ গুণীজন সম্মাননা লাভ করেন।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহানা আক্তার এই গুণীজনদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও পরিচালক অরুণা বিশ্বাস।
সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণীজনরা হলেনÑ ২০১৮ সালে লোকসংস্কৃতি উপর বিশেষ অবদানের জন্য মো. আবুল বাশার আব্বাসী, কণ্ঠ সঙ্গীতে বিউটি আক্তার, যাত্রা শিল্পে গোকুল ঘোষ, চারুকলায় পরিমল চন্দ্র অধিকারী, নাট্যকলায় হরিপদ সূত্রধর, ২০১৯ সালে কণ্ঠ সঙ্গীতে রতন কুমার সাহা, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে আবুল ইসলাম শিকদার, চারুকলায় গোপাল চন্দ্র পাল, যাত্রা শিল্পে তাপস সরকার, যন্ত্র সঙ্গীতে মো. তসলিম উদ্দীন, ২০২০ সালে সৃজনশীল সংস্কৃতিক সংগঠন সাংস্কৃতিক বিপ্লবী সংঘ চারুকলার মো. খোরশিদ আলম, কণ্ঠ সঙ্গীতে রুমানা ইসলাম, যন্ত্র সঙ্গীতে গোবিন্দ চন্দ্র রায় এবং লোক সংস্কৃতিতে মো. হাকিম উদ্দীন। শেষে এক মনোঞ্জ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
বাউল শিল্পী আবুল বাসার জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি এ দুটো বিষয় চর্চা করলে যে তাদের সন্তানরা সমাজে বখাটে ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হবে না, সেটি তারা বোঝার চেষ্টা করেন না। তবে কিছু অভিভাবক আছেন, যারা সন্তানদের ছবি আঁকা, সঙ্গীত চর্চা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদিতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। সাধারণত শিক্ষিত মা-বাবারা সবসময় সন্তানের পছন্দকে প্রাধান্য দেন।
অনেক গুণীজনের ধারণা, সন্তানকে গান শুনতে দিলে, সিনেমা দেখতে দিলে তারা খারাপ হয়ে যাবে। এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। একজন শিশুকে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে হলে তার বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে অবসর সময়ে শিশুদের ভালো গান ও শিক্ষণীয় সিনেমা দেখতে দেয়া উচিত। এতে তারা সমাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবে। সন্তানদের অবসর সময়ে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা করতে দিলে তারা কখনো খারাপ কাজের দিকে ঝুঁকবে না।
বয়াতি সাইদুর রহমানের সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে যেসব মানুষ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে, তারা সমাজে নানাভাবে উপেক্ষিত। আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পেশায় কামার, কুমার, জেলে, বাউল ইত্যাদি। এরা আমাদের সমাজে নানা কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছেন।
নিজস্ব শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এসব বিষয়কে অবলম্বন করে বেঁচে থাকা মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্যে-সহযোগিতা করে সমাজে একটা স্থান করে দিতে হবে। কারণ শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমাদের পরিচয় বহন করে। সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ যখন বড় বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তখন তাদের সেই সমস্যা থেকে উত্তরণে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে তাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সঙ্গীত শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন। অন্যদিকে চিত্রশিল্পীরাও মুক্তিযুদ্ধের ছবি এঁকেছেন, যা বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক ধারণা দিচ্ছে। আমাদের সমাজকে স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লালন করতে হবে। এ জন্য সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য আহ্বান জানান সাইদুর রহমান বয়াতি।