রেল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দক্ষিণ কোরিয়া

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:৪২ | অনলাইন সংস্করণ

  রতন বালো:

  •     রেলমন্ত্রীর সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
  •     আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার কোরিয়া -জিল্লুল হাকিম, মন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়
  •     রেলখাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে -পার্ক ইয়ং সিক, রাষ্ট্রদূত, দক্ষিণ কোরিয়া

রেল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দক্ষিণ কোরিয়া। জাপানের পাশাপাশি কোরিয়া বাংলাদেশের রেলসহ নানা বিষয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। জাপানের হাত ধরে প্রথম মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। উত্তরা থেকে কমলাপুর লাইন-৬-এ অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা)। চলমান এমআরটি ১ ও ৫-এ দুটি প্রকল্পেও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে দেশটি। তবে বাংলাদেশে মেট্রোরেল মানেই জাপান, এই ধারা থেকে বের হয়ে আসছে সরকার। মেট্রোরেল লাইন-৪ প্রকল্পে সম্ভাব্য অর্থায়নকারী দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ঋণ নেয়ার আলোচনা চলছে। মেট্রোর কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে যুক্ত হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া এখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী।

এ বিষয়ে গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউন হি সুংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের এক অসাধারণ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ অংশীদার হয়ে উঠেছে।

সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের প্রতি তাদের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যা বছরে প্রায় ৩০০-৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম-রোড ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ইউনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সেতুটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট সমস্যার সমাধান করবে এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং বিশেষ করে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য মাতারবাড়ি (সোনাদিয়া) গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য একটি প্রশস্ত করিডোর তৈরি করবে। সবমিলিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের এক অসাধারণ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ অংশীদার হয়ে উঠেছে।

রেল উন্নয়নে দক্ষিণ কোরিয়া আগ্রহী প্রকাশ করার বিষয়ে গতকাল রোববার বিকেলে রেলভবনে রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের পার্ক ইয়ং-সিক এর সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, সৈয়দপুরে আমাদের একটি রেলওয়ে কারখানা রয়েছে এবং রাজবাড়ীতে আরেকটি আধুনিক রেলওয়ে কারখানা নির্মাণ করা হবে। রেলওয়েতে আমরা নতুন কোচ, ইঞ্জিন সংগ্রহ করছি। নতুন নতুন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে, ব্রিজ নির্মাণ ও সংস্কার করা হচ্ছে। সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে  দক্ষিণ কোরিয়া এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি। রেলখাতের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। রেলমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের রেল খাতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে কোরিয়াকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এ সম্পর্কে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। আশা করি, রেলখাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তথ্য বলছে, এমআরটি-৪ রুটটি কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া-সাইনবোর্ড-চট্টগ্রাম রোড দিয়ে শেষ হবে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে। মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ১৬ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ইডিসিএফ এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ) থেকে ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। সরকার বহন করবে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, খরচটি চূড়ান্ত নয়। বিস্তারিত সমীক্ষার পরই জানা যাবে কত টাকা খরচ হবে। 

 

আমার বার্তা/রতন বালো/এমই