সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে সরকারের অর্জন বলতে কিছুই থাকবে না: সালাহউদ্দিন

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ফাইল ছবি

সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অর্জন বলতে কিছুই থাকবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ: সফল নির্বাচন আয়োজনে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করাই জাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, সে অনুযায়ী কমিশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের অর্জন রয়েছে, ব্যর্থতাও রয়েছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে অর্জন বলতে কিছুই থাকবে না অন্তর্বর্তী সরকারের।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়তোবা পোষণ করতে পারিনি। সময় আছে, আশা করি, সবাই আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারব।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও মুক্ত গণমাধ্যম অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রক্ষাকবচ। এগুলো নিশ্চিত হলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আগামী দিনে আর কোনো চ্যালেঞ্জ থাকবে না।

সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘শুধু নির্বাচিত জাতীয় সংসদই সংবিধান সংশোধনের অনুমোদন দিতে পারে। ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় গেলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

‘সংসদে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রস্তাব আমরা ১০ শতাংশ দিয়েছি। বাকিটা মাঠে গিয়ে বোঝা যাবে। আমাদের এখনো ৭০ শতাংশ নারী পর্দানশীল। তারা পারিবারিক কারণে আসতে পারছে না। তাই নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এখনো কম।’

জুলাই গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, বিচার তার বিচারিক প্রক্রিয়ায় চলবে। যে সরকারই আসুক, বিচার থেমে থাকবে না।

মতবিনিময় সভায় ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে, তার একটা টেস্ট ছিল ডাকসু নির্বাচন। এই টেস্টে রাজনৈতিক দল, সুধী সমাজ ও শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে উত্তরণ করেছে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সরকারের বৈঠক হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখ সদস্য মাঠে থাকবেন। তবে ভালো নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। আর জনগণ যদি বানের জলের তোড়ের মতো ভোট দিতে যান, তাহলে কারও সাধ্য নেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, অনেকে বলছে, সরকার কিছু করেনি। সেগুলো তারা না পাওয়ার বেদনা থেকে বলছে। সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়ে বলতে হলে সব পরিসংখ্যান হিসাব করে বলতে হবে। বিপ্লবপরবর্তী সময়ে অনেক দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে এমন কিছু হয়নি, এটাই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

প্রেস সচিব বলেন, ইউটিউবে যা হচ্ছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। এখনকার প্রজন্ম সংবাদমাধ্যম থেকে নিয়মিত তথ্য নেয় না। তারা ইউটিউব থেকে তথ্য নেয়। সেখানে কেউ কেউ নিয়মিত মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। কোনো দেশের সরকার এগুলো সহ্য করে না। এটা নিয়ে কথা বলতে গেলেই বলা হবে, অন্তর্বর্তী সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাসী নয়।

সভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চলতি মাস থেকেই সরকারকে কাজ শুরু করার আহ্বান জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

সাকি বলেন, দেশের কোথাও কোনো দলের সঙ্গে অন্য দলের সংঘাত হলে, অগণতান্ত্রিক আচরণ হলে, সেই প্রশ্নগুলো এখন থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং হওয়া দরকার। আসন্ন নির্বাচনে যে দল সরকার গঠন করবে, সেই দলের সঙ্গে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিবেশ নিয়ে কাজ করলে হবে না।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।


আমার বার্তা/এমই