চাপ দিয়ে তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: নুর

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

কিছু ব্যক্তি পরস্পর যোগসাজশে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী ও তার ছেলে কনট্রেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করিয়েছে বলে দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

সোমবার দিনগত রাতে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন নুর।

নুরুল হক নুর দাবি করেন, ‘জনকণ্ঠ’ দখলের ন্যায় ‘মাই টিভি’ দখলেও সুপরিকল্পিতভাবে কিছু ব্যক্তি পরস্পর যোগসাজশে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। এতোদিন তারা নগদ ৫ কোটি কিংবা শেয়ার লিখে নেয়ার দেনদরবার করেছে, সমঝোতায় মিলেনি, তাই ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল মবের মাধ্যমে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবাকে গ্রেফতার করিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুর বলেন, এই যে তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবাকে যাত্রাবাড়ী থানার ছাত্র হত্যা মামলায় আসামি করে ১ বছর পর গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। মামলার বাদী কি জানে এই মামলায় কাকে কাকে আসামি করা হয়েছে? তৌহিদ আফ্রিদি কিংবা তার বাবা ‘ছাত্র হত্যা’ করেছে এই মামলা প্রমাণ করতে পারবে? তাহলে কেন এই নাটক?

আফ্রিদি যদি লীগের হয়ে কিছু করে থাকে সেজন্য তাকে সুনির্দিষ্টভাবে সেসব অভিযোগে মামলা দেওয়া যেত বলে উল্লেখ করেন নুর। তিনি প্রশ্ন তুলেন, সে ধরনের মামলা না করে কেন তাকে ও তার বাবাকে যাত্রাবাড়ীর ‘ছাত্র হত্যা’র মামলায় ভিত্তিহীনভাবে আসামি করে এক বছর পর গ্রেপ্তার করানো হলো? এই যে হঠাৎ বিপ্লবের চেতনায় দখলদার হয়ে ওঠা ‘ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল মব’ সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তদের চাপে প্রশাসন মাঝে মাঝে কিছু বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর প্রভাব কি প্রশাসন বা আমরা উপলব্ধি করতে পারতেছি?

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকার ফলে এ দুজনের গ্রেপ্তার দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনসহ অনেকক্ষেত্রে রেফারেন্স হবে যে, এভাবে যারা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, গণমাধ্যমের মালিক/ব্যবসায়ী/সেলিব্রিটিরাও মবের শিকার হচ্ছে। তাদেরকেও ঢালাওভাবে আসামি করে প্রশাসন অন্যায়ভাবে গ্রেফতার হয়রানি, মামলা বাণিজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ফলে প্রকৃত অপরাধীদেরও বেলাতেও রেফারেন্স হিসেবে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও অন্যান্য সংস্থা এগুলোকে উদাহরণ হিসেবে তাদের রিপোর্টে তুলে ধরবে (এ বিষয়টি হয়তো সাধারণ মানুষ অনেকেই বুঝবে না, তাদের জন্য বলা; মাঝে মাঝে নিশ্চয়ই দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশসমূহ লীগ আমলে বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে রিপোর্ট দিতো) ব্যবহার করবে।

এসব ইস্যুতে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়বে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাবে দেশি-বিদেশি চাপে অনেকক্ষেত্রে সরকার/আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ গ্রহণে পিছপা হতে বাধ্য হবে বলে মনে করেন নুর। তিনি বলেন, কার্যত এসব ভুল পদক্ষেপ প্রকারান্তে ফ্যাসিবাদের ফেরারই রাস্তা তৈরিতেই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সবশেষে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, ‘জনকণ্ঠ’ দখলের ন্যায় ‘মাই টিভি’ দখলেও যারা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এগুলো করাচ্ছে তাদের মুখোস উন্মোচন করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় সোমবার বিকেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে উল্লিখিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। চব্বিশের জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে সে সেলিব্রেটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধে প্ররোচিত করেছে এবং যারা তার কথায় দ্বিমত পোষণ করেছেন তাদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।

এক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্রজনতার দাবিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ যোগায়।

রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, আসামির উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাতদিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

গত ২৪ আগস্ট রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। মামলায় নাসির উদ্দিন ২২ নম্বর এবং তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

একই মামলায় গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানা এলাকা থেকে নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১৮ আগস্ট তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।


আমার বার্তা/জেএইচ