এক-দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করা সম্ভব: আমির খসরু
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:০১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের অনেক আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি জামায়াত প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়েও কথা বলেছেন।
আমির খসরুর কাছে প্রশ্ন ছিল, সম্প্রতি লন্ডনেবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ দুজন নেতার সাক্ষাতে কী আলোচনা হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো আলোচনার বিষয় নেই এখানে। ওনারা দেখা করতে চেয়েছেন। এটা হচ্ছে সৌজন্য সাক্ষাৎ। এর বাইরে আমার অন্তত কিছু জানা নেই এ ব্যাপারে। এই কালচারটা (দেখা-সাক্ষাৎ) কিন্তু আমাদের নষ্ট করে দেওয়া উচিত নয়।
‘সংস্কার সেরে আগামী রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে’-জামায়াত আমিরের এমন মন্তব্যে লন্ডনে বিএনপির হাই কমান্ডের সঙ্গে সাক্ষাতের যোগসূত্র আছে কিনা-এমন জিজ্ঞাসার জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই প্রভাবশালী সদস্য বলেন, ‘আমি তো স্পেকুলেট (অনুমান) করতে পারব না কী আলোচনা হয়েছে। আমি তো বলেছি, আলোচনা হতে অসুবিধা নেই এবং আলোচনার ফল যদি কোথাও হয়ে থাকে সেটারও অসুবিধা কী। আলোচনা করে যদি কোনো কিছুর সমাধান হয়, এটাই বা খারাপ কী। এ জন্যই আলোচনাটা দরকার। গণতন্ত্রের একটি বড় স্তম্ভ হচ্ছে ডায়ালগ (সংলাপ), এটা তো শুধু মুখে মুখে বললে হবে না।’
দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নেরও মুখোমুখি হন আমির খসরু। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো ডিসেম্বরের আগেই আশা করতে পারি। কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তো সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল তাদের প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছি অলরেডি (ইতিমধ্যে)। আমরা আমাদের সংস্কারের প্রস্তাব জমা দিয়েছি, অন্যান্য দলও দিয়েছে। সুতরাং যেখানে ঐকমত্য হয়েছে, এই জিনিসগুলো বলা হচ্ছে না কেন। এটা তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার না, এতে এক সপ্তাহও লাগার কথা না।’
‘এই জিনিসটা বের করার জন্য তো নতুন কিছু আবিষ্কার করার দরকার নেই। শুধু একটা টেবিল (ছক) করা যে এ জায়গায় ঐকমত্য হয়েছে। যেগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে সে বিষয়গুলোকে সামনে এনে ‘জাতীয় সনদ’ যেটা বলছে, সেটাতে সই করে দিলাম। সুতরাং নির্বাচন ঘোষণা তো আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে করা সম্ভব এবং ডিসেম্বরের অনেক আগে করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন বলছে তারা প্রস্তুত, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমরা তো কোথাও সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না’-যোগ করেন আমির খসরু।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দলের কথা এখানে বলব না। কোন দল থাকবে, কোন দল থাকবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এটা তো আমার সিদ্ধান্ত না, এটা জনগণের সিদ্ধান্ত।’
আগামী দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি জনগণের আস্থা ছাড়া রাজনীতি করতে চান তাহলে এ আলোচনা ঠিক আছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই বিএনপির রাজনীতি। আমি যদি সেটাই করি, তাহলে সংসদে কারা আসবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের কারও নেই।’
বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি কোনো বিশেষ দল, ব্যক্তি, দেশকেন্দ্রিক না। বিএনপির রাজনীতি বহুপক্ষীয়, মাল্টিলেটারাল। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় ছিল, জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে—আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বহুপক্ষীয়। সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহুপক্ষীয়। ভারত একটি দেশ এবং ভারতের গুরুত্ব তারা আমাদের প্রতিবেশী। সুতরাং এ সবকিছু মাথায় রেখেই আমাদের আগামী দিনের বিদেশ নীতি।’
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার চায় ভারত, সে লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে দেশটি- এক্ষেত্রে বিএনপির চাওয়া ভারতের সঙ্গে মিলে গেছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন, তো নির্বাচন ছাড়া কি গণতন্ত্র হবে? আমি আনন্দিত যে ভারত এত দিন পর এই জায়গায় এসেছে। আমাদের এত বড় প্রতিবেশী, যারা নিজেরা গণতান্ত্রিক, তাদের যে এ জায়গায় আসতে এত দিন সময় লাগল, তবু এত দিন পর যে তারা অনুধাবন করতে পারছে বাংলাদেশের একটি গণতান্ত্রিক সরকার দরকার, এটা ভালো খবর। আমি আশা করব, ভারতের এই চিন্তাটা যাতে অব্যাহত থাকে।’
আমার বার্তা/জেএইচ