শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমরা অপরাধী?
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১৭:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ
জি এম ইয়াছিন:

যখন একজন শিক্ষক জাল সনদধারী হয়েও আদালতের আশ্রয় নেন, তখন তাঁকে বাঁচাতে নড়েচড়ে বসে কিছু স্বার্থান্বেষী এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা। আবার, অষ্টম শ্রেণি পাস একজনকে—যিনি একজন প্রভাবশালী সাবেক এমপির স্ত্রী—জাল সনদে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ দিয়ে সেই কলেজ জাতীয়করণে সহযোগিতা করাও সম্ভব হয়েছে। এমনকি আবেদনপত্র ছাড়াই অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে, যেমন: নরসিংদীর পলাশ উপজেলার খুদি মাহমুদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামের শ্যালিকা রাবেয়া সুলতানা।
অন্যদিকে, একই প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার আবেদন করেও যোগ্য সনদধারী প্রার্থীদের বলা হয়েছে—“যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না।” এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে, প্রায় ৬০ হাজার জাল সনদধারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এমনকি একজনের সনদ অন্যজন ব্যবহার করছে—এটা তো শুধু অবাক করার নয়, ভয়ংকর বাস্তবতা। আমাদের বৈধ সনদও কেউ না কেউ ব্যবহার করছে কি না, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।
এখন এই ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতির বিরুদ্ধে যারা সাহসের সঙ্গে আওয়াজ তুলেছে—তাদেরই চাকরি না দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এনটিআরসিএর একাংশ। কারণ শিক্ষক পরিষদের নেতারাই এনটিআরসিএ’র দূর্নীতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এজন্য তাদেরকে ‘গলার কাঁটা’, ‘বিষফোঁড়া’ মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
গত ১৬ জুন, একটি ফেসবুক গ্রুপে মন্তব্য করা হয়েছিল—"শিক্ষক পরিষদের কোনো নেতাকে এনটিআরসিএ’র কেউ চাকরি দিতে চায় না।" এই মন্তব্যটি যেমন সত্য, তেমনি দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এ সিদ্ধান্তটি আসলে একটি অশুভ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্ত—যার লক্ষ্য একটাই: দুর্নীতিকে ঢেকে রাখা, সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া। কিন্তু এতে আমরা বিচলিত নই। কারণ:
এনটিআরসিএ যদি শিক্ষক পরিষদের কোনো নেতাকে নিয়োগ না দেয়, তাহলে তিনটি ‘উপকার’ হবে—
- ১. এনটিআরসিএ রূপান্তরিত হবে ফেরেশতাদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে।
- ২. সেখানে কোনো চোর থাকবে না।
- ৩. দূর্নীতির গন্ধও থাকবে না।
কারণ, তখন আর কেউ থাকবে না যারা সাহস করে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবে। কেউ আর জানতে চাইবে না—
- নূরে আলম সিদ্দিকী তিনবার হজে গেছেন, সেই খরচ এলো কোথা থেকে?
- লুৎফর রহমান আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে কীভাবে চাকরির যোগ্যতা ছিনিয়ে নিচ্ছেন?
- এবং সাবেক সচিব ওবায়দুর রহমান, যিনি বলেছিলেন “১০০ বছরেও সনদ দেওয়া যাবে, কিন্তু ৩৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ চাকরি পাবে না”—তিনি আর প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন না।
সুতরাং, এমন এক ‘পরিপূর্ণ নিষ্কলুষ’ প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে—শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক জি এম ইয়াছিনসহ সকল নেতাকে বাদ দিতে হবে।
এই সিদ্ধান্তই এনটিআরসিএ’র পবিত্রতার পথকে সুগম করবে। কারণ সত্য বলা অপরাধ, দুর্নীতির প্রতিবাদ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ—এই চেতনাই যদি চলে, তাহলে এনটিআরসিএ হয়ে উঠবে ‘আজাজিল ফেরেস্তাদের’ নিবাস।
আমরা, বৈধ সনদধারী শিক্ষকরা, জানাতে চাই—আমরা পিছপা হব না। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি যোগ্যতার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব।
লেখক : আহ্বায়ক, এনটিআরসিএ নিবন্ধিত ১ম-১২তম ব্যাচের শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশী পরিষদ।
আমার বার্তা/জি এম ইয়াছিন/এল/এমই