ইসরাইল মুসলিম বিশ্বের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  কমল চৌধুরী:

ইসরাইল বিভিন্ন সময়ে ঠুনকো অজুহাতে গাজা, লেবানন, ইরান, মিশর, সিরিয়া, ইরাক আক্রমণ করেছে এবং কোথাও কোথাও  আগ্রাসন চালিয়েছে। ইসরাইল ইতিমধ্যে জোরপূর্বক সিরিয়ার বেশ কিছু ভূখন্ড দখল করে নিয়েছে। আদিকাল থেকেই ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের ঘোর শত্রুতা  অব্যাহত। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর সময় থেকেই ইহুদীরা মুসলমানদের সাথে শত্রুতা করে আসছে । এই শত্রুতার যেন শেষ নেই।  অনন্তকাল পর্যন্ত মনে হয় এ শত্রুতা চলবেই। মুসলমানদের সাথে ইহুদীদের যুদ্ধ, সংঘাত এর ধারাবাহিকতায় ইহুদীরা বিশ্বের মুসলমানদের উপর অত্যাচার করে আসছে। গাজায় সংঘাত দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্টিগুলো গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্বে আক্রমণ চালায়। শুধু প্রতিশোধ নিতে এতে একতরফাভাবে গাজায় মুসলমানদের উপর ইসরাইলের বোমা ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত হামাসের প্রায় ৪৬ হাজার মুসলমান নিহত ও ১ লক্ষ ৪০ হাজার আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৩২ হাজার শিশু, কিশোর ও  নারী রয়েছে। যুদ্বের নামে ইসরায়েলী সৈন্যরা গাজার নিরস্ত্র নীরিহ  শিশু, কিশোর ও নারীকে  অকাতরে গুলি করে হত্যা করছে। বিগত পবিত্র মাহে রমজান মাসে এবং ইদের দিনে ও তারা বোমা হামলা করেছে। ইসরায়েলীদের এ নারকীয় হত্যাযঞ্জের জন্য  সারা বিশ্বের লোকেরা (৩/৪টি আমেরিকাপন্থী দেশ ছাড়া) নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। বিশেষ করে মুসলমানদের উপর ইহুদিদের অত্যাচার/হামলাকে মানবতাবাদী লোকেরা কোনভাবেই মেনে নিচ্ছে না। তাই হামলা বন্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো একমত  হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ইসরাইল এবং গাজার যুদ্ধবন্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি বিল পাস হয়েছে। এতে আমেরিকা ভোট প্রদান করেনি এবং ভেটো ও দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিলটি পাস হয়ে যায়। কিন্তু  ইসরাইলরা জাতিসংঘের এই ঘোষণাকে ও মানছে না। তারা  গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র,জর্ডান ইহুদিদেরকে সাহায্যও সমর্থন করছে। আমেরিকা আরো ২৫০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ইসরাইলে পাঠানোর সন্মতির সিদ্বান্তে ফিলিস্তিনিরা এবং বিশ্বের শান্তিপ্রিয় লোকেরা হতবাক।   
 

আসলে আমেরিকা আন্তরিকভাবে চায় না যুদ্ধ বন্ধ হোক।  সম্প্রতি আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে হুমকি দিয়েছে।যদি আগামি ২০ জানুয়ারীর মধ্যে হামাসে ইসরাইলের যুদ্দবন্দীদের মুক্তি দেয়া না হয় -তাহলে হামাসকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।কারণ আগামী ২০ জানুয়ারী ট্রাম্প  প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত¦  গ্রহণ করবেন। ইসরাইলের ইহুদি সৈন্যরা এতই ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর যে, তারা গাজায় মুসলমানদের হাসপাতালে বোমা হামলা করেছে ও লাশের উপর ট্যাংক চালিয়ে লাশকে থেতলে খন্ড বিখন্ড করেছে। অতি সম্প্রতি গাজার রাফায় কয়েকটি হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। এতে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনির লাশের অস্তিত্ব/কংকাল পাওয়া যায়। জাতিসংঘের সাহায্যের জন্য যে সমস্ত শরণার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেছে, তাদের উপর ইসরায়েলী সেনারা  বোমা হামলা ও গুলি করেছে।  হাসপাতালে ঢুকে তারা অক্সিজেন বন্ধ করে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের বের করে দিয়েছে। গাজায় শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে ইহুদী সৈন্যরা এখনো  নীরিহ শিশু, কিশোর ও নারীদেরকে হত্যা করে চলেছে। ইসরাইলীরা প্রতি ৩০ মিনিটে গাজায় একটি করে শিশু হত্যা করছে। অনেক বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। ইহুদীরা গাজায় মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছে। গাজা নগরী এখন মহাশশ্মানে পরিণত হয়েছে। গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক যুদ্বাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্বে জাতিসংঘ অতি সম্প্রতি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে। যুক্তরাজ্য ও আরো ৭টি দেশ নেতানিয়াহুকে তাদের ভুখন্ডে পা রাখলে আটক করার সিদ্বান্ত নিয়েছে। ইসরায়েল গাজার রাফায় পুনরায় ন্থলযুদ্বের সিদ্বানÍ নিয়ে একতরফাভাবে বোমা হামলা চালাচ্ছে। রাফা থেকে ইতিমধ্যে জীবন বাঁচাতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মুসলিম অন্যত্র পালিয়ে গেছে।  ্এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা। আসলে সারাবিশ্বেই মুসলমানরা ইহুদী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের হাতে অকাতরে মার খাচ্ছে। ইসরাইল রাফা নগরী দখল করে ফেলছে। প্রতিদিন শত  লোককে ইসরাইল নির্মমভাবে হত্যা করলে ও আমেরিকা বলছে রাফায় ইসরাইল সীমিত পরিসরে আক্রমণ চালাচ্ছে। আমেরিকার আস্কারা পেয়েই ইসরাইল জাতিসংঘের  নিষেধাঞ্জা সত্বে ও রাফায় একতরফাভাবে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। সারাবিশ্বের মুসলমান রাষ্ট্রগুলো যদি একজোট হতো, তাহলে মুসলমানদেরকে ইহুদিদের হাতে মার খেতে খেতে করুণ দুর্দশার শিকার হতে হতো না। ইসরাইল জাতিসংঘের কথা না মানাতে জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।  হিটলার যদি পৃথিবীতে আর মাত্র দুই বছর বেঁচে থাকতো, তাহলে এখন আর কোন ইহুদির বংশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যেতো না। হিটলার মৃত্যুর পূর্বে বলেছিলÑআমি পৃথিবীতে কিছু ইহুদি রেখে গেলাম। যাতে মানুষ ইহুদীদের সম্পর্কে বুঝতে পারে- আসলে ওরা কেমন!

ইসরায়েল-লেবানন সংঘাত, বা দক্ষিণ লেবানন সংঘাত, একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ যা ইসরায়েল, লেবাননভিত্তিক আধাসামরিক গোষ্ঠী এবং মাঝে মাঝে সিরিয়ার অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়। লেবাননের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন এই সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে। লেবানন থেকে আসা ফিলিস্তিনি আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ১৯৭৮ সালে এবং পরে ১৯৮২ সালে দেশটিতে আক্রমণ চালায়। এরপর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন দখলে রাখে, এ সময়ে শিয়া আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ চলে। ইসরায়েল প্রত্যাহার করার পর, হিজবুল্লাহর আক্রমণ ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধের সূচনা করে। ২০২৩ সালে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়, যা ২০২৪ সালে ইসরায়েলের লেবাননে আক্রমণের দিকে গড়ায়।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর বহিষ্কৃত বা পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মধ্যে থেকে লেবাননে মুজাহিদদের নিয়োগ করে। ১৯৭০-৭১ সালে পিএলও নেতৃত্ব এবং এর ফাতাহ ব্রিগেডকে জর্ডান থেকে বিদ্রোহের কারণে বহিষ্কার করার পর, তারা দক্ষিণ লেবাননে প্রবেশ করে, যা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তঃসীমান্ত সহিংসতা বাড়িয়ে দেয়। এদিকে, লেবাননের জনসংখ্যাগত উত্তেজনা লেবাননের গৃহযুদ্ধের (১৯৭৫-১৯৯০) দিকে পরিচালিত করে।

 

গৃহযুদ্ধের বিস্ফোরণের মূল কারণগুলোর মধ্যে পিএলওর কর্মকাণ্ড এবং লেবাননের বিভিন্ন দলের সঙ্গে তাদের তিক্ত সংঘর্ষ ছিল, যা বিদেশি হস্তক্ষেপের পথ সুগম করে। ইসরায়েল ১৯৭৮ সালে লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে পিএলওকে লিটানি নদীর উত্তরে সরিয়ে দেয়, কিন্তু পিএলও তাদের আক্রমণ চালিয়ে যায়। এই আক্রমণের ফলস্বরূপ দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয়। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল আবার লেবাননে আক্রমণ করে এবং খ্রিস্টান লেবানিজ বাহিনীর সঙ্গে মিলে পিএলওকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করে।
১৯৮৩ সালে ইসরায়েল ও লেবানন ১৭ মে চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে। তবে ১৯৮৪ সালের প্রথম দিকে শিয়া ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের দখলের কারণে এই সম্পর্ক ভেঙে যায়। ইসরায়েল ১৯৮৫ সালে লেবাননের বেশিরভাগ এলাকা থেকে সরে যায়, কিন্তু দক্ষিণ লেবানন আর্মি (এসএলএ) এর প্রক্সি যোদ্ধাদের সহায়তায় ১৯ কিলোমিটার (১২ মাইল) দীর্ঘ নিরাপত্তা বাফার জোনের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।

 

১৯৮৫ সালে হিজবুল্লাহ, একটি লেবানিজ শিয়া ইসলামি আন্দোলন যা ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ছিল, লেবাননে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয়। এই গোষ্ঠী দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং দক্ষিণ লেবানন আর্মির (এসএলএ) বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালায়। ১৯৯০-এর দশকে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে দুটি বড় সামরিক অভিযান চালায়: ১৯৯৩ সালে অপারেশন অ্যাকাউন্টিবিলিটি এবং ১৯৯৬ সালে অপারেশন গ্রেপস অফ রাথ। হিজবুল্লাহর সঙ্গে এই লড়াই ইসরায়েলের মনোবলকে দুর্বল করে এবং এসএলএর পতন ঘটায়। এর ফলে ২০০০ সালে ইসরায়েল জাতিসংঘের মনোনীত সীমান্তের পাশে থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। শেবা খামারগুলিতে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে, হিজবুল্লাহ পরবর্তী ছয় বছর ধরে বিরতিহীনভাবে আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ চালিয়ে যায়। হিজবুল্লাহ এখন ইসরায়েলি কারাগারে আটক লেবাননের নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে এবং ২০০৪ সালে বন্দী বিনিময়ের জন্য ইসরায়েলি সৈন্যদের বন্দী করার কৌশল সফলভাবে ব্যবহার করে।

হিজবুল্লাহ কর্তৃক দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে বন্দী করার ফলে ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধের সূচনা ঘটে, যা আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ এবং দক্ষিণ লেবাননে আরেকটি ইসরায়েলি আক্রমণের দিকে নিয়ে যায়। যুদ্ধবিরতির সময় হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য এবং ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার আহ্বান জানানো হয়। ৮ সেপ্টেম্বর শত্রুতা স্থগিত করা হয়। ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করলেও পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত হয়ে ওঠে। ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিন লেবাননের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে ফ্লাইট চালিয়ে যায়, কিন্তু হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র হয়নি। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে গোলাগুলির সময় সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।

লেবানিজ পেজার এবং ওয়াকি টকির ইসরায়েলি বিস্ফোরণের মাধ্যমে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংঘাত আরও বৃদ্ধি পায়। এর পর ইসরায়েল লেবানন জুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে, যার ফলে ২৩ সেপ্টেম্বর কমপক্ষে ৫৬৯ জন নিহত হয়; যা গৃহযুদ্ধের পর লেবাননে একদিনে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ-সম্পর্কিত প্রাণহানির ঘটনা। ১৯১৬ সালের সাইকেস-পিকোট চুক্তির মাধ্যমে কল্পনা করা ফরাসি এবং ব্রিটিশ প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের অঞ্চল।     
 

ইসরায়েল এবং লেবানন রাষ্ট্রের অঞ্চলগুলি একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল, যা ১২৯৯ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এবং ১৯২২ সালে পরবর্তী বিলুপ্তি পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৯১৭ সালে সিনাই এবং প্যালেস্টাইন অভিযানের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখল করে এবং এর কিছু অংশ সিরিয়ায় পরিণত হয়। ফরাসি সৈন্যরা ১৯১৮ সালে দামেস্ক দখল করে। ১৯১৬ সালের সাইকস-পিকোট চুক্তি অনুসারে, ১৯২০ সালের সান রেমো সম্মেলনের পর লিগ অব নেশন আনুষ্ঠানিকভাবে ফরাসীদের সিরিয়ার ম্যান্ডেট এবং ব্রিটিশদের প্যালেস্টাইনের ম্যান্ডেট প্রদান করে।

ফরাসি ম্যান্ডেটের প্রধান খ্রিস্টান ছিটমহল ১৯২৬ সালে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত লেবানিজ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। লেবানন ১৯৪৩ সালে স্বাধীন হয়েছিল কারণ ফ্রান্স জার্মান দখলে ছিল, যদিও ফরাসি সৈন্যরা ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত পুরোপুরি প্রত্যাহার করেনি।
 

ইউরোপে ইহুদি-বিদ্বেষের উত্থান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হলোকাস্টের পরিণতিতে, ইহুদি অভিবাসীদের সংখ্যালঘু ইহুদি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব ম্যান্ডেটে বৃদ্ধির অর্থ ছিল। ১৯৩৬-৩৯ সালের আরব বিদ্রোহের সময় এবং তারপরে ব্রিটিশরা ক্রমশ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য ইহুদি পুলিশ বাহিনীর উপর নির্ভর করতে শুরু করে।
 

অবশেষে, ইহুদি অভিবাসন এবং সহযোগিতার কারণে আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা ও সহিংসতার ফলে ব্রিটিশদের ১৯৪৭ সালে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। জর্ডান নদীর পূর্বে তাদের ম্যান্ডেটের এলাকা ইতিমধ্যে ১৯৪৬ সালে জর্ডানের স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।  জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৪৭ সালের ইউএন পার্টিশন প্ল্যান তৈরি করেছিল, যা আরব এবং ইহুদিদের উভয়কেই তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র দেওয়ার চেষ্টা করে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অবশিষ্টাংশ থেকে; যাইহোক, এটি আরবরা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং পরিস্থিতি দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।

১৯৪৮ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ: ১৯৪৮ সালে, লেবাননের সেনাবাহিনীর কাছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট আঞ্চলিক সেনাবাহিনী ছিল, যার মধ্যে মাত্র ৩,৫০০ সৈন্য ছিল। এই অঞ্চলে আরব নেতাদের অনুরোধে, লেবানন প্যালেস্টাইন আক্রমণের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেট অঞ্চলের ঘেরের চারপাশে একত্রিত হওয়া অন্যান্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে সম্মত হয় । লেবাননের এই কারণে ১,০০০ সৈন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরব বাহিনী ম্যান্ডেটের সমাপ্তি এবং ব্রিটিশ বাহিনীর প্রত্যাহারের জন্য অপেক্ষা করছিল, যা ১৫ মে ১৯৪৮-এর জন্য নির্ধারিত ছিল।

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পরের দিন, ব্রিটিশ ম্যান্ডেট আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়াদ শেষ হয় এবং একটি অফিসিয়াল ক্যাবলগ্রামে, লেবাননসহ সাত সদস্যের আরব লীগ ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনার পরিবর্তে একটি গণতান্ত্রিক "ফিলিস্তিন যুক্তরাষ্ট্র" তৈরির লক্ষ্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। লীগ শীঘ্রই ফিলিস্তিনি আরবদের পক্ষে সংঘাতে প্রবেশ করে, এইভাবে ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের আন্তর্জাতিক পর্ব শুরু হয়। মিশর, লেবানন, সিরিয়া, ট্রান্সজর্ডান এবং ইরাক নতুন রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তারা ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ নামে একটি সহজ এবং দ্রুত বিজয় আশা করেছিল। লেবাননের সেনাবাহিনী অন্যান্য আরব সেনাবাহিনীর সাথে আগ্রাসনে যোগ দেয়। এটি উত্তর গ্যালিলিতে প্রবেশ করে। যদিও সংঘর্ষের শেষের দিকে, এটি ইসরাইলি বাহিনী দ্বারা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। যা দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল। ইসরাইল তার প্রতিটি আক্রমণকারী প্রতিবেশীর সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। লেবাননের সাথে যুদ্ধবিরতি ১৯৪৯ সালের ২৩ মার্চ স্বাক্ষরিত হয়। লেবাননের সাথে চুক্তির অংশ হিসাবে, ইসরাইলি বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রত্যাহার করে।

সেই যুদ্ধের শেষের দিকে ইসরাইল প্রতিবেশী সব আরব দেশের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে।   এটি এখন যে অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে তা জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনার অধীনে বরাদ্দ করা হয়েছিল তার থেকেও ভাল ছিল, পরিকল্পনার অধীনে ফিলিস্তিনি আরবদের কাছে যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগই অন্তর্ভুক্ত করে। যাইহোক, সেই সময়ে সমস্ত পক্ষের দ্বারা বোঝা গিয়েছিল যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিগুলি ইসরায়েলের সাথে শান্তি চুক্তি নয়, বা সীমান্তসহ তাদের মধ্যে বিরোধের চূড়ান্ত সমাধান নয়। যুদ্ধের পরে, জাতিসংঘ অনুমান করেছে ৭১১,০০০ ফিলিস্তিনি আরব, প্যালেস্টাইনের ম্যান্ডেটে বসবাসকারী আনুমানিক ১.৮ মিলিয়নের মধ্যে পালিয়ে গেছে, দেশত্যাগ করেছে বা ইসরায়েল থেকে জোরপূর্বক বের হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রবেশ করেছে। ১৯৪৯ সাল নাগাদ লেবাননে ১১০,০০০ ফিলিস্তিনি আরব ছিল, যা কাছাকাছি প্রাচ্যে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত শিবিরে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

বৈরুত এলাকার দুটি শিবির বাদে, শিবিরগুলো বেশিরভাগই ছিল মুসলিম। লেবাননের খ্রিস্টানরা আশঙ্কা করেছিল যে মুসলিম আগমন তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য এবং তাদের অনুমানকৃত জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে প্রভাবিত করবে। তদনুসারে, তারা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মর্যাদার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। শরণার্থীরা কাজ, ভ্রমণ বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারত না। প্রাথমিকভাবে উদ্বাস্তুরা তাদের উদ্বেগের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য খুবই দরিদ্র ছিল। কম গণতান্ত্রিক শাসন শরণার্থীরা তাদের নিজস্ব শাসনের জন্য হুমকির আশঙ্কা করেছিল, কিন্তু লেবানন ক্র্যাকডাউন বজায় রাখতে খুব দুর্বল প্রমাণিত হয়েছিল। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের পরিবারের মধ্য থেকে লেবাননে মুজাহিদদের নিয়োগ করেছিল।


লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কবি।

 

আমার বার্তা/কমল চৌধুরী  এমই