অভিপ্রেত কালক্ষেপণকারী
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৬ | অনলাইন সংস্করণ
হাফিজা খাতুন স্নেহা
নগর থেকে পল্লি, পল্লি থেকে নগরে যাদের ছুটে চলা, ঠিক তেমনি জীবন থেকে জীবনের তরে কিছুটা দেখে, কিছুটা অনুভব করে তারা বৃহৎ ভাবনায় ভাবনারত। সংজ্ঞা ? সে তো কখনো বা দ্বিধা, কখনো বা ছোট্ট এক টুকরো ভুলের সংজ্ঞায়নে সংজ্ঞায়িত। আপনি যদি জীবনের এই অংশের একবিন্দুও ভাগীদার হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার সাথেও কোনো না কোনো উপত্যকায় এই বিষদ ভাবনার মিল পরিলক্ষিত যে হবেই এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
যাদের ভ্রমণের মাধ্যম কেবল একটাই তারাই বেশি অনুধাবন করতে পারবে,তবে আপনার নিশ্চয়ই কখনো না কখনো বাস ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে, কখনো লোকাল বাস, কখনো বা আবার একটু ভিআইপি বাস। আপনি যদি আরামপ্রিয় এবং বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন, তাহলে লোকাল বাস আর একটু ভিআইপি বাসের তফাতটা খুব সহজেই বুঝে ফেলবেন। কেন বলছি, কি বলছি, বুঝতে পারছেন না? বুঝতে চান? আচ্ছা চলেন ঘুরে আসি কিছু দশক পূর্বে,,,
কোথাও কেউ নেই, চারিদিকে ঘোর অন্ধকার হয়ে আসছে, সেখানের একমাত্র যাতায়াত মাধ্যম বাস, আমি শ্রাবণের শেষদিকে এক বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছি, সেদিন ছিলো ঝুম বৃষ্টি, এক ভদ্র লোক ভিআইপি বাসে ভ্রমণ করছিলেন, কি সৌভাগ্য তার! আর এদিকে আমি একটা লোকাল বাসও পাচ্ছিলাম না, তবে যা বুঝলাম সেই ভিআইপি বাসের সমস্যা ছিলো অন্য সবের ন্যায় সে প্রচারণা করতো না,সে যে অন্য আর দশের মতো না।
কিন্তু পরে যা দেখলাম সেটা চিন্তার বাইরে ছিলো। হঠাৎ বিকেলের শেষ মুহূর্তে চালকের সামান্য ভুলকে বৃহৎ সংজ্ঞায়নে ভদ্র লোক একটু নেমে দাঁড়ালেন, এতে চালকের মন ভার হলো, ভদ্র লোক নানা আকার ইঙ্গিতে পুনরায় বাসে উঠতে চাইলেও চালক আর তেমনভাবে চায়নি, কিছু সময়ের ব্যবধানে ভদ্রলোক অন্য বাসের সন্ধানে সন্ধিহান হয়ে অন্য বাসে উঠে পড়ে, আবার সেই চালকের করা সামান্য ভুল তার বৃহৎ করে মনে হয়েছিলো সেটার পুনরাবৃত্তি যদি এ চালকও করেন,সেই ভয়ে এই বাস থেকেও নেমে আগের স্টপেজে এসে দাঁড়ায় এবং আবার আগের বাসের চালককে আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে থাকে সে পুনরায় এই বাসেই বাকিটুকু পথ পাড়ি দিতে চাই, এদিকে এই ভিআইপি বাসের চালক সবটা দেখেছে সে যে সামান্য ভুলে নেমে গিয়ে অন্য বাসের সন্ধানে সন্ধিহান হয়েছিলো, তাই তো আর বাস চালকের মনে তাকে নিতে সায় দেয় না।জীবনের সাথেও কত রকমভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে এই চিত্র জড়িত,তবে খুব কমই পরিলক্ষিত হয় কারণ চালকেরা সাধারণত নেমে যাওয়া যাত্রীদেরকেও আবার স্থান দিয়ে থাকে। হ্যাঁ এটা ঠিক সব চালক যে সমান নয়। শুরুতে বাস চালকের মন খারাপ হয়েছিলো সাধারণভাবেই, এতোটা পথ একসাথে পাড়ি দিয়ে এইতো আর কিছুটা পথ গেলেই তাকে নিরাপদে নামিয়ে দিয়ে সে তার নির্ধারিত পরিমাণ ভাড়া পেয়ে যেতো। ভদ্রলোক যাত্রার কিছু অংশের ভাড়া দিতে চাইলেও চালক সেটাও তার থেকে নিতে রাজি নন।
তবে চালক জানতো তাকে তো বাকিটা পথ কোনো না কোনো বাসেই যেতে হবে,সেখানে তাকে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। যদিও সেটা ভদ্র লোককে চালক জানাই নাই। কারণ চালক চেয়েছিলো সে নিজে থেকেই যেন উপলব্ধি করে, তাই চালক তার থেকে ভাড়াও নিলো না, তাকেও নিলো না। পরিশেষে অন্য বাসে ভ্রমণ করলেও ভদ্র লোকের আর কাঙ্খিত বাসটিতে করে ফেরা হলো না,যেখানে সে অধিক নিরাপদে যেতে পারতো বিশ্বাসের সাথে। এভাবেই অবচেতন মনে কিছুটা রাগে-ক্ষোভে জীবনের পথে চলতে গিয়ে ভদ্রলোকটি বেশ বড়োসড়ো ভুল করে ফেলে যেটা সে সঠিক সময়ে অনুধাবন করেছে ঠিকই তবে সময় ফুরালে।
এরপর চালক সেই ভদ্রলোকটির দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে আপন গতিতে একাই চলে যাচ্ছিলো আমি দ্রুতই সুযোগ হাতছাড়া না করে উঠে গেলাম, এরপরে সবটা শুনতে শুনতে চালকের সাথে আমি নিরাপদে ঘরে ফিরছি আর মনে মনে ভাবছি.......
এ যেন আমার জীবনে শ্রাবণের ঘনঘোর দিন কাটিয়ে আশ্বিনের আবির্ভাব। এই একটা অনুভবই হতে থাকলো সারাটি পথ।
হাফিজা খাতুন স্নেহা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমার বার্তা/জেএইচ