জ্ঞানের কোন বয়স নাই, চাকরি প্রবেশে কেন বয়সসীমা থাকবে!
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
মো. আরফাতুর রহমান:
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতির শিখরে উন্নীত হতে পারে না। জীবনের শিখার কোন শেষ নেই। জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আমরা শিখেই চলেছি। পুরো জীবনটাই একটি শিক্ষাক্ষেত্র। শিক্ষা গ্রহণের জন্য কোন বয়সের প্রয়োজন হয় না, কোন সময়ের প্রয়োজন হয় না। কথায় বলে ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ী ঘোড়ায় চড়ে সে’, জানার কোনো শেষ নেই, শিক্ষার কোন বয়স নেই। তাই অক্ষর জ্ঞানহীন যে কেউ যেকোন বয়সেই পড়ালেখা করে জ্ঞানের অন্ধকার থেকে শিক্ষার আলোর জগতে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
যেখানে মেধা যাচাইয়ের জন্য ৩৫ বয়সসীমার সুযোগ চাওয়া, সেখানে কেন ৩২ দিয়ে মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে? জাতি জানতে চায়।
"হে রাষ্ট্র! আমরা (৩৫ প্রত্যাশীরা ও ক্ষেত্রবিশেষে উন্মুক্ত) চাকরী চাই নাই, শুধু চেয়েছি আন্তর্জাতিক মানদন্ডের ভিত্তিতে চাকরী প্রবেশের একটি যথাযথ সুরাহা। চাকরী পরীক্ষা দিয়ে মেধা যদি থাকে তারপর চাকরী পাওয়া।" কিন্তু রাষ্ট্র বুঝলো কি আর বুঝাইলো কি! এত এত গবেষণার প্রতিবেদন কি কোনই মূল্য নাই। সংস্কার কমিটির সুপারিশ পর্যন্ত উপেক্ষা করার কি প্রয়োজনীয়তা ছিল। এটাও যদি বলতেন, সব পরিস্কার হয়ে যেত। নাকি একটা গোষ্ঠীকে কৌশলে পঙ্গু বানিয়ে রেখে দেশের বেকারত্বের বোঝা বহন করানো। তাহলে তাই যদি হয় নাগরিক হিসেবে আমরা বলতে পারি রাষ্ট্র এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না।
আমরা ঘৃণা চিত্তে প্রত্যাখান করেছি ৩২ কে, অবিলম্বে সংশোধনী এনে (যেখানে বর্তমান গেজের ৪ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে) চাকরীতে প্রবেশের বয়সীমা ৩৫ ও ক্ষেত্রবিশেষ উন্মুক্ত করে দ্রুত প্রজ্ঞাপন দিন।
দীর্ঘ ১২ বছরের আন্দোলনকে কেন সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটে নাই তা নিয়ে সাধারণ ছাত্র সমাজ ও বিশিষ্টজনেরা গবেষনা করছে। গবেষনায় বেরিয়ে আসছে আসল তথ্য, যার প্রধান কারণ মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের কাছে ৩৫ প্রত্যাশীদের আর্তনাদ সঠিকভাবে পৌছানো হয় নি। ধারণা করা হচ্ছে সুবিধাবাদী কাছের ব্যক্তিবর্গের স্বার্থের কারণে একটি যৌক্তিক দাবিকে ছেলে খেলার মত নাটক সাজানো হয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রতি ছাত্র সমাজের হৃদয়কে ভেঙে দেয়া হয়েছে। আরও একটি কারণ ধারণা করা হচ্ছে, ৩৫ না করার পেছনে রয়েছে কোন এক গোষ্ঠীর গভীর ষড়যন্ত্র। সম্ভ্রান্ত শ্রেণিকে সুযোগ দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণ ছাত্রদের দাবি হলো, সরকার যেন এসব সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে অবিলম্বে ৩৫ বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারি করে।’ মেধার অভাবে যেখানে বাংলাদেশের প্রতি সেক্টরের দূর্নীতিতে লন্ডভন্ড সেখানে কেন মেধার অবমুল্যায়ন জাতি জানতে চায়? কেন ৩২ প্রজ্ঞাপন দিয়ে এক শ্রেণিকে চাকরীর সুযোগ করে দেয়া আর অন্য একটা শ্রেণিকে ৩৫ এর কারণে বৈষম্যের শিকার হতে হবে। ২৪’ এর অভ্যুত্থান বৈষম্য দূর করার জন্যই হয়েছিল, বিষয়টি অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছে। ২৪-এর অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল মেধার ভিত্তিতে দেশ গঠন কিন্তু এখন দেখছি কোনো একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সব করা হচ্ছে। প্রহসন করে, বৈষম্য দূর না করে কিসের সংস্কার হচ্ছে জাতি জানতে চায়! ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংস্কার করার লক্ষ্যে একটি অভিজ্ঞ কমিশন গঠন করা হয়। যার প্রধান করা হয়েছিল, সাবেক সচিব মুয়ীদ চৌধুরী স্যারকে। তার নেতৃত্বে গঠিত সেই কমিটি ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স পুরুষদের ৩৫ ও নারীদের ৩৭ করার সুপারিশ করেছে। তিনি কেন এই সুপারিশ করেছেন তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন। তিনি সেদিন সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক মানদন্ড বিবেচনা করে, সেশনজট, প্রশ্ন জালিয়াতি, দূর্নীতি, অর্থনৈতিক আচল অবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে চাকরিতে প্রবেশের বিদ্যমান বয়স বাড়ানো উচিত। কিন্তু উক্ত কমিশনের সুপারিশ আমলে না নিয়ে একদল অদক্ষ স্বার্থন্বেষী মহল ৩২ প্রজ্ঞাপন দিতে চাপ প্রয়োগ করে, যা ছাত্র সমাজ ঘৃনা চিত্তে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে? নানাদিক থেকে সরকারের এমন আচরণ ভালো চোখে দেখছে না সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতাবৃন্দ। তাছাড়া এও বলা হচ্ছে, সরকারকে সমালোচলা, বিপদে ও চাপে ফেলার ৩২ এর প্রজ্ঞাপনের কুট বুদ্ধির নাটক সাজানো হচ্ছে।
একজন শিক্ষার্থীর জাতীয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করতে সময় লেগে যায় ২৭-২৮ বছর। অন্য দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীশদের ২৩-২৪ বছর। শুধু মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই চাকরীর প্রস্তুতি ভালো করে নিতে পারে এবং ৩২ পাওয়ার পেছনে এটাও কারণ ধরা হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন গুটি কইয়েক শিক্ষার্থীদের আমলে নিয়ে ৩২ এর প্রজ্ঞাপন হয় নি তো! আর যদি তাই হয় তাহলে জেনে রাখা উচত বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা নয়। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরীতে প্রতিযোগিতা করতে আসে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না হওয়ায় কেন বৈষম্যের শিকার হবে। বাংলাদেশে কি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই চাকরী করবে! ৩৫ প্রত্যাশীদের ধারণা।
যারা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চাকরীর সময়সীমা ৩৫ ও ক্ষেত্রবিশেষ উন্মুক্তের জন্য আন্দোলন করলো তারা কি পেলো! ৩২ পেয়ে যারা লাভবান হলো তাদের না হয় শান্ত করা গেল কিন্তু যারা এতদিন এ আন্দোলন চালিয়ে গেল তাদের জন্য কি রাষ্ট্রের কিছুই করার নেই। তাদের দায়িত্ব কেন নিবে? তারা কি বাংলদেশের নাগরিক না? তাদের ট্যাক্সে কি দেশ পরিচালিত হয় না? ৩৫ হয়ে যাওয়ার কারণে কি তাদের আবর্জনা মনে করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হচ্ছে না! জাতি কাছে ৩৫ প্রত্যাশীদের প্রশ্ন!!!
৩৫ প্রত্যাশীদের এক্তাই দাবি ছিল যে কোন মূল্যে ৩৫ প্রজ্ঞাপন ও ক্ষেত্রবিষয় উন্মুক্ত। কে চাইলো সরকারের কাছে ৩২ । এটাও জাতির কাছে প্রশ্ন ৩৫ প্রত্যাশীদের। বিসিএস এর মতো পরীক্ষায় সংশোধন করে ৪ বার করা হয়েছে। এটা কি বৈষম্য নয় একজন শিক্ষার্থীর জন্য।
একজন শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট অর্জনের পেছনে অনেক কষ্টের গল্প থাকে, ৩২ বয়সসীমা বেঁধে দিয়ে তাকে কেন হতাশার চাঁদরে ঢেকে দিচ্ছে। সার্টিফিকেটের মেয়াদ কেন ৩২ থাকবে, প্রয়োজনে উন্মুক্ত করাটাই ছিলো যৌক্তিক সমাধান । কিন্তু তা না করে আন্দোলনটাকে আরও দীর্ঘায়ু হচ্ছে।
যারা এমপি,মন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হয় তাদের কোন বয়স লাগে না তাদের কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগেনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হতে পারে আর ছাত্ররা সামান্য একটা চাকরি করে জীবন পরিচালনা করবে তাতে ৩২ বছর পার হলে জীবন শেষ। এ কেমন বৈষম্য বিধায় চাকরিতে বয়স সীমা উন্মুক্ত করা উচিত। ৩২ এর প্রজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে প্রহসন। কেউ ৩২ চায় নাই। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ৩৫ এর জন্য আন্দোলন হয়েছে। তাহলে কাদের স্বার্থের জন্য ৩২ করা হলো জাতি জানতে চায়।
উর্ধ্বতন মহল থেকে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ৩২ করা হয়েছে সেই সকল শিক্ষার্থীদের জাতির সামনে আনা হোক যারা ৩২ চেয়েছিলো। যে আন্দোলনের বয়স ১২ বছর হতে পারে, সেই আন্দোলন প্রহসনমূলক ৩২ প্রজ্ঞাপন দিয়ে বন্ধ করা কঠিন হবে। প্রজ্ঞাপন কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। ইহা চালেই প্রয়োজনের নিমিত্তে পরিবর্তন করে সংশোধীত প্রজ্ঞাপন এনে এর উত্তম সমাধান হওয়া উচিত। কোন আন্দোলনকেই অমীমাংসিত রাখা উচিত নয়। চাকরির বয়স নিয়ে সরকারের করা ৩২ প্রজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত ঘৃণা চিত্তে প্রত্যাখ্যান করেছে ৩৫ প্রত্যাশীরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা । চাকরীতে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বিবেচনা এনে বয়সকে নয়, মেধাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রজ্ঞাপন হলে অনেক শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা পূরণ হবে।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
আমার বার্তা/মো. আরফাতুর রহমান/এমই