বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  কমল চৌধুরী:

গত ৫ অক্টোবর শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর  ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ২১ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে  এ সরকার ও হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের  হাহাকারে স্পষ্ট হয় যে সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি পতিত আওয়ামী লীগের জন্য কতোটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।
 

দলটি ২০০৯ সালের শুরুতে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে পরপর তিন মেয়াদে গত ১৫ বছর সরকার পরিচালনা করেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো দীর্ঘ সময় একটানা আর কোনো দলের ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। প্রতিবার নির্বাচনি ইশতেহারে জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অঙ্গীকার করা হলেও এই দেড় দশকের শাসনামলে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে করা সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে জানা যায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি চলতি বছর রেকর্ড ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির তথ্যমতে, দেশে গত পাঁচ বছরে শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম ৩১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।


বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে দলটির নেতারা দাম বাড়ার পেছনে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে ওঠানামা, ডলার সঙ্কটের যুক্তি দাঁড় করেছিল।কিন্তু দেখা গিয়েছে দাম আগের মতোই বাড়তি। অন্যদিকে যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় সেগুলোর দাম বিশ্ব বাজারে কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রতিফলন নেই।

সিপিডির গবেষণা বলছে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল, গরুর মাংসের দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। এমন অবস্থায়  পতিত আওয়ামীলীগ সরকার বাজারের লাগাম টানতে বিভিন্ন সময়ে ভোগ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে, অভিযান চালিয়ে, জরিমানা করে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিসহ নানা উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য অনেকে 'ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে' দায়ী করছেন, যাদের সাথে সাবেক সরকারি দলের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু অতীতে বিভিন্ন সময় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে সরকারের মন্ত্রী কিংবা এমপিরা প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

গত বছর ২৬শে জুন সংসদ অধিবেশন চলাকালে  সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতাদের কঠোর সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। এটা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে।" ২০২৩ সালের ১১ মে তৎকালীন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন,অর্থনীতি ও বাজার- এ দুই জায়গায়ই তৈরি হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছে এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে।

এমনিতেই ১৯৫৩ সালে প্রণীত মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারি-বিরোধী আইন রয়েছে। ২০০৯ সালে প্রণীত হয় ভোগ্যপণ্য সংরক্ষণ আইন। সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন প্রণয়ন এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়। ২০১৮ সালে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ আইন প্রণীত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রচলিত আইনগুলো প্রয়োগে যে বিচারিক ব্যবস্থা দরকার সেগুলো অনেক সময় কাজ করে না। এই লাগাম দাম বাড়ার পেছনে, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং বাজারে চাহিদা ও যোগান সম্পর্কিত তথ্যে স্বচ্ছতার অভাব থাকাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তার মতে, পতিত আওয়ামীলীগ সরকার সমস্যাগুলো সনাক্ত করলেও এগুলো সমাধানে যে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজন সে বিষয়ে কিছু করেনি। তারা কোন কাঠামোগত সংস্কারে যায়নি। একে সাবেক সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা উল্লেখ করে মি. ভট্টাচার্য বলেন, “পণ্যের যোগান যেখানে স্বাভাবিক, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চাইতে উন্নত, বাজার সুসংহত, সেখানে দাম বাড়ার একটাই কারণ তা হল পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা গুটিকয়েক ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠ সাবেক সরকারের ওপরে প্রভাব বিস্তার করেছিল।” “এটা অস্বীকার করার উপায় নাই উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত কৃষি উৎপাদিত পণ্য পৌঁছাতে আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। আমরা এখনও পর্যাপ্ত হিমাগার করতে পারিনি। এজন্য পেঁয়াজ, আলুর মতো পচনশীল পণ্যগুলোর স্থায়িত্ব বাড়ানো যাচ্ছে না। আমাদের ইম্প্রুভমেন্টের অনেক জায়গা আছে।” এরপরও দাম বাড়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে তিনি ডলারের দরপতন এবং পরিবহন খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব নিত্য-পণ্যের দামের যে তালিকা দিয়েছে সেখান থেকে গত ১৫ বছরের হিসেবে দেখা যায় নিত্য পণ্যের দাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল ঊর্ধ্বমূখী। ক্যাবের তালিকা, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তালিকা থেকে মোটা চালসহ এমন নয়টি পণ্যের দাম ধাপে ধাপে কিভাবে এই পর্যায়ে এসেছে । ক্যাবের তালিকা অনুযায়ী ২০০৯ সালে মোটা চালের দাম জাত ভেদে প্রতি কেজি গড়ে ২৩ টাকা থেকে ২৮ টাকা মধ্যে ছিল। এই চালের দাম পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় গড়ে ৩৪ থেকে ৩৭ টাকা কেজি।

এদিকে সবশেষ এপ্রিলে সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) এক বৈঠকে জানানো হয় দেশে বিগত পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম ৫৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে মোটা চালের গড় দাম ছিল ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা, যা চলতি বছরের মার্চে দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ১১ পয়সা। এই পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে চালের দাম। অন্যদিকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে পাঁচ বছর ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চাইতে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি।

২০২২ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখিয়েছিল, অতি গরিব শ্রেণিভুক্ত একজন মানুষ তাঁর ব্যয়ের ৩২ শতাংশ খরচ করেন চাল কিনতে। গরিব মানুষের ক্ষেত্রে এই হার ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া গরিব নন, এমন ব্যক্তি তাঁর ব্যয়ের এক-পঞ্চমাংশ চাল কেনায় খরচ করেন। সিপিডির প্রতিবেদনে ১৬টি দেশের তালিকা করা হয় যেখানে মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) বাংলাদেশের তুলনায় বেশি, তবুও সেই দেশগুলোর ভোক্তারা বাংলাদেশের মানুষদের তুলনায় খাদ্যে কম ব্যয় করে। সিপিডি বলছে, যেসব পণ্য গরিব, মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এবং বাজারে বেশি বিক্রি হয় সেগুলোতে মুনাফাখোররা বেশি লাভ করছে।

এদিকে ক্যাবের তালিকা অনুযায়ী, প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল কেজি-প্রতি গড়ে ১১১ টাকা। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে জাত ভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। ১৫ বছরে মসুর ডালের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে এই পণ্যটির দাম ২০১৬ এবং ২০২৩ সালে ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। না হলে বেশিরভাগ সময় এর দাম কেজিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যেই ছিল। সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৯৫ শতাংশ।

ক্যাবের তালিকা অনুযায়ী ২০০৯ সালে আলুর দাম ছিল জাত ভেদে প্রতি কেজি গড়ে ২৫ থেকে ২৬ টাকা। ২০১১ সালে এই দাম কমে সর্বনিম্ন ১৪ টাকায় নেমে আসে। এরপর ধাপে ধাপে দাম বেড়ে ২০১৪ সালে হয় ১৯ থেকে ২১ টাকা কেজি। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩২ টাকা। তবে গত বছরের শেষে আলুর দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে কেজি প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় দাঁড়ায়। তবে বর্তমানে টিসিবির হিসাবে আলুর দাম প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এদিকে ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ফার্মের লাল ও সাদা মুরগির ডিম এবং দেশি মুরগির ডিমের দামও ধাপে ধাপে বেড়েছে। ২০০৯ সালে ডিমের দাম হালি প্রতি ছিল গড়ে ২৮ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। যা বাড়তে বাড়তে ২০১৪ সালে এসে দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৪২ টাকা। ২০১৯ সালে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়ে হয় ৩৬ টাকার মতো।

তবে গত বছর মুরগীর ডিমের দাম রেকর্ড বেড়ে প্রতি হালি ৫০ থেকে ৫৮ টাকায়। টিসিবির হিসাবে বর্তমানে এই দামই বহাল আছে। গত দেড় দশকে দামের সবচেয়ে বেশি উত্থান দেখা গিয়েছে গরুর মাংসের বাজারে। ক্যাবের হিসেবে ২০০৯ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ২১৮ টাকা। যা বাড়তে বাড়তে ২০১৪ সালে কেজি প্রতি ৩০০ টাকায় দাঁড়ায়। পরের বছরই এ লাফে দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে এই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪১ টাকা কেজি। সেটা ছয়শ টাকায় দাঁড়ায় ২০২১ সালে। বর্তমানে  প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। এমন দামের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষেরা শুধুমাত্র কোরবানির ঈদে গরুর মাংস খাওয়ার আশা করেন।

সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে গরুর মাংসের দাম ৫৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি হয়েছে ৭৬৫ টাকা। একই সময়ে বিশ্ববাজারে প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৬৩ টাকায়। এদিকে ব্রয়লার মুরগীর দাম সবসময়ই সামান্য ওঠানামার মধ্যে ছিল। ক্যাবের হিসেবে ২০০৯ সালে ব্রয়লার মুরগীর দাম ছিল ১১৮ টাকা কেজি। যা ২০১৪ সালে হয় ১৪৭ টাকা কেজি, ২০১৯ সালে দাম এর কাছাকাছি ছিল। তবে গত বছর ব্রয়লার মুরগীর দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। প্রতি কেজি দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায়।
 

সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে ব্রয়লার মুরগীর দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দামে গত ১৫ বছর কিছুটা উত্থান পতন দেখা গিয়েছে। ২০০৯ সালে ভোজ্যতেলের দাম ছিল প্রতি লিটার গড়ে ৮২ থেকে ৮৫ টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ থেকে ১১৭ টাকা লিটার। তবে ২০১৯ সালে দাম কিছুটা কমে প্রতি লিটার ৮৫ থেকে ১০৫ টাকায় দাঁড়ায়। যা টিসিবির হিসাবে বর্তমানে ১৪৫ থেকে ১৬৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। যেটা কিনা গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ছিল ১৭৫ থেকে ১৯৫ টাকা লিটার, ২০২২ সালে তা আরও ১০ টাকা বেশি ছিল। ভোজ্য তেল আমদানিকৃত পণ্য হওয়ায় সরকার বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে। অথচ গত বছর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়তে থাকলেও বাংলাদেশের ভোক্তারা এর সুফল পাননি।
 

সিপিডির তথ্য বলছে,উল্লেখিত পাঁচ বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। একইভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫৬ শতাংশ বেড়ে ১৬৩ টাকা হয়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে একই সময়ে সয়াবিন তেল বিত্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০৫ টাকায়। আমদানি খরচ ও শুল্ক বাদ দিলে দেশের বাজারে পণ্যটি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দামের বিতর্কে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পেঁয়াজের নাম কয়েকবার উঠেছে। ক্যাবের হিসেবে ২০০৯ সালে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ টাকা কেজি। যা ২০১৫ সালে বেড়ে হয় ৬৫ টাকা কেজি। তারপর বিভিন্ন সময় দাম বাড়া কমার মধ্যে ছিল।

তবে ২০১৯ সালের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম বিগত সব রেকর্ড ভেঙে ২৫০ টাকা কেজিতে দাঁড়ায়। বর্তমানে টিসিবির হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে পেঁয়াজের দাম ১৬৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে রশুনের দাম বেড়েছে ৩১০ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ। এছাড়া শুকনো মরিচ ১০৫ শতাংশ,আদা ২০৫ শতাংশ এবং গুড়ো হলুদের দাম ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে চিনির দামও গত দেড় দশকে ওঠা নামার মধ্যে ছিল। ২০০৯ সালে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৪৪ টাকা। যা ধাপে ধাপে বেড়ে ৫৭ টাকায় ওঠার পর আবার কমে ২০১৪ সালে ৪৮ টাকা কেজিতে দাঁড়ায়। এরপর চিনির দাম ৬৮ টাকা ওঠার পর ২০১৯ সালে কিছুটা কমে ৫৭ টাকা হয়। এরপর দাম শুধুই বেড়েছে।
 

সবশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সরকারি মিলের চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। যা দেশের বাজারে চিনির দামে রেকর্ড। তবে বর্তমানে (২রা জুনের হিসাব) টিসিবির হিসাবে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি। সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে চিনির দাম ১৫২ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা হয়েছে। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে এই সময়ে প্রতি কেজি চিনির দাম ৩৯ টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৯৬ টাকা। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে গড়ে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। ভোগ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ।
 

সিপিডির গবেষণা বলছে, ২০১৯ সাল থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক ছিল। মানুষের আয় কম হলেও খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। মি. ভট্টাচার্যের মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত মানুষ তাদের আহারের পরিমাণ কমিয়ে এনেছে। এ কারণে তারা আগে যে পরিমাণ পুষ্টি পেত, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে খরচ করতো, সেটা আর পারছে না। সরকার কম দামে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে যেসব সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। এবং সেখানেও দুর্নীতি রয়েছে বলে তিনি জানান।আবার যেসব পণ্যের দাম খুব একটা বাড়ছে না, সেগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।

 

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কবি।

 

আমার বার্তা/কমল চৌধুরী/এমই