আন্তর্জাতিক রুট ফাঁস, আটক নারী গায়ানায় আগে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত
শাহজালালে কোকেন কাণ্ড
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গায়ানার নাগরিক এম.এস. পেটুলা স্টাফেলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮.৬৬ কেজি কোকেনের (বাজারমূল্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা) মামলায় তদন্তে মিলেছে আন্তর্জাতিক পাচার নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে—চালানটি ব্রাজিল থেকে এসেছে এবং পথে আরও দুইটি দেশ অতিক্রম করেছে। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার হয়ে ঢাকায় এসে, এখান থেকে অন্য দেশে পাচারের পরিকল্পনা ছিল। তদন্তকারীরা বলছেন, পেটুলা স্টাফেল ঢাকায় এসে চক্রের হাতে মাদক পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। তাকে আগে একাধিকবার বাংলাদেশে আসা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি অনুসন্ধান চলছে—বাংলাদেশি কেউ এই চালান ক্রয়ে অর্থায়ন করেছে কি না, কিংবা দেশে চক্রটির কোনো স্থানীয় নেটওয়ার্ক সক্রিয় আছে কি না।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের উপপরিচালক সোনিয়া আক্তার জানান, সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর৬৩৮ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন পেটুলা স্টাফেল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়। গ্রিন চ্যানেলে প্রবেশের সময় তাঁর লাগেজ স্ক্যান করলে প্লাস্টিকের ভেতরে রাখা ২২টি ডিম্বাকৃতির ফয়েল মোড়ানো প্যাকেট উদ্ধার হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় সেগুলো কোকেন হিসেবে শনাক্ত হয়।
ঢাকার মহানগর হাকিম নাজমিন আক্তার বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই মাজেদুল ইসলাম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। শুনানিতে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
উদ্ধার হওয়া কোকেনের মোট ওজন ৮ কেজি ৬৬০ গ্রাম। বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কোকেন ব্রাজিল থেকে আসে, পথে আরও দুটি দেশ অতিক্রম করেছে। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার হয়ে ঢাকায় এসে, এখান থেকে অন্য দেশে পাচারের পরিকল্পনা ছিল। এই রুট আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে ‘লো-রিস্ক ট্রানজিট’ হিসেবে পরিচিত।
তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন—বাংলাদেশি কেউ এই চালান ক্রয়ে অর্থায়ন করেছে কি না অথবা চক্রটির স্থানীয় সদস্য আছে কি না।
ক্যারেন পেটুলা স্টাফল, ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গায়ানার স্ট্যাব্রোয়েক নিউজে তার এই ছবি প্রকাশিত হয়।
ক্যারেন পেটুলা স্টাফল, ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গায়ানার স্ট্যাব্রোয়েক নিউজে তার এই ছবি প্রকাশিত হয়।
ক্যারেন পেটুলা স্টাফেলের বিরুদ্ধে কোকেন পাচারের অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গায়ানার চেদ্দি জাগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১.১৪২ কেজি কোকেনসহ ধরা পড়েন। নিউ ইয়র্কের জন এফ. কেনেডি বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পথে আটক হন। পরবর্তীতে গায়ানার আদালত তাঁকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ২৩ লাখ ডলার জরিমানা করে।
পূর্ববর্তী কোকেন উদ্ধার ঘটনা:
জানুয়ারি ২০২৪: শাহজালালে ৭ কেজি কোকেন উদ্ধার, জড়িত পশ্চিম আফ্রিকার এক নাগরিক।
অক্টোবর ২০২৩: আন্তর্জাতিক কুরিয়ারে ৪ কেজি কোকেন জব্দ, উৎস দক্ষিণ আমেরিকা।
জুন ২০২২: চট্টগ্রাম বন্দরে খাদ্যপণ্যের চালানের মধ্যে ৫ কেজি কোকেন উদ্ধার।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, “বিমানবন্দর দিয়ে যেন কোনোভাবেই মাদক প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।”
আমার বার্তা/জেএইচ