নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে
বদিউল আলম মজুমদার
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেছেন, সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এখন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা, সেটা সরকার ও নির্বাচন কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায়ই সিদ্ধান্ত নেবে। আর আওয়ামী লীগ ছাড়া আগামী নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক হবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অনিশ্চয়তা দেখছেন না জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারও আন্তরিকভাবেই নির্বাচনের পথেই এগুচ্ছে। আশা করছি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, সবাই যার যার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। দেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে।
বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থাই তাকে স্বৈরাচারের পরিণত করেছে। এজন্যই সংস্কার পরিবার প্রয়োজন। নির্বাচন ব্যবস্থা পুরনো ব্যবস্থায় চললে নির্বাচন আবারও বিতর্কিত হবে। স্বৈরাচার সৃষ্টির পথ থেকে যাবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলেও দল, প্রার্থী ও ভোটারদের দায়িত্বশীল ভূমিকা ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষের এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে ৪০ হাজার কেন আরো বেশি বডি ক্যামেরা কিনে নিরাপত্তা জোরদার করলেও গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। তাই যেকোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নিরপেক্ষ না থাকলে আমরা আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার যে স্বপ্ন দেখছি তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণা হলেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। সনাতন না পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে এখনো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় জুলাই সনদে স্বাক্ষরসহ আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নতুনভাবে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন যদি সঠিক সময়ে করা সম্ভব না হয় তাহলে দেশ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। তাই গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের গতিকে বেগবান করা উচিত।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে স্বৈরাচার বিরোধী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি বর্জন করে নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে কোনো বিভেদ তৈরি করা যাবে না। যদি আগামী নির্বাচন আয়োজন নিয়ে এই বিভেদ ও মতবিরোধ বাড়তে থাকে তাহলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিভেদের সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তি দেশে অরাজকতা তৈরি করতে পারে। তবে কেউ কেউ দেশে ১/১১ ও গৃহযুদ্ধের যে জুজুর ভয় দেখাচ্ছে তা অমূলক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ফ্যাসিবাদ ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ও শক্তি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
এর আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই প্রধান শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি দল বিজয়ী হয়।
এতে বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন ও সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
আমার বার্তা/এমই