নির্বাচনের আগে সংস্কার চান দেশের বেশির ভাগ মানুষ: জরিপ

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৫:০৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান।

নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন অধিকাংশ নাগরিক। আইন-শৃঙ্খলা, অর্থনীতি, শিক্ষা, দুর্নীতি দমন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারকে জনগণ সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে জানিয়েছে এক সাম্প্রতিক জরিপ।

সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে ‘ডিআইজিডি পালস সার্ভে’র গবেষণা পেপার উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই আন্দোলন’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ভয়েজ ফর রিফর্মের এ কে এম ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. মিরাজ এম হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বিআইজিডির সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. আসিফ শাহান।

গবেষণা পেপার উপস্থাপন করেন সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, ১ থেকে ২০ জুলাই সারা দেশের ৫ হাজার ৪৮৯ জনের ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে ৫১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন—“ভালোভাবে সংস্কার সম্পন্ন করে তারপর নির্বাচন” হওয়া উচিত। ১৭ শতাংশ মনে করেন, কিছু জরুরি সংস্কারের পর নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে, আর ১৪ শতাংশ সংস্কার ছাড়াই সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে। ১৩ শতাংশ জানিয়েছেন, সংস্কার বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই এবং ৮ শতাংশ মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

জরিপে দেখা যায়, জনগণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা কমানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারকে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, বেকারত্ব হ্রাস, শিক্ষা সংস্কার, দুর্নীতি দমন, অর্থনৈতিক সংস্কার, সাংবিধানিক সংস্কার, পুলিশ ও আইন ব্যবস্থার সংস্কারকেও জরুরি দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্যানেল আলোচনায় ড. মিরাজ এম হাসান বলেন, “বাংলাদেশের সাধারণ বা গরিব মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতি ও রাজনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার গবেষণায় দেখা গেল, তারা এই দুই ক্ষেত্র থেকেও কিছুটা মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষ অন্য কোনো বিষয়ে ভাবতে পারে না। যদি দাম সহনীয় হয়, তখনই তারা আইন-শৃঙ্খলা বা অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে, বিশেষ করে জনতা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। জনগণের মধ্যে বিশ্বাস আছে, নির্বাচনের পর সরকার যদি আইন মেনে চলে, তাহলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। শেখ হাসিনার শাসনামলে তৈরি হওয়া ভয়ের সংস্কৃতি এখন কেটে গেছে, আর সেটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে নারীর অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় সাধারণ মানুষের সমর্থন বেড়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান বলেন, “আগে মানুষ ভাবত, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে দেশ খারাপ হয়। কিন্তু এবার আমরা দেখলাম, অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো থাকলেও মানুষ দেশকে ভালো মনে করছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।”

নারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কেন বেশি—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “নারীরা ভোটের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ভয়েজ টাইপ কার্যক্রমে তাদের নিয়ে মিটিং বা আলোচনার সুযোগ হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দলই নারীদের সামনে তুলে ধরছে না।”

সংস্কার প্রসঙ্গে আসিফ শাহান বলেন, “মানুষ সংস্কার চায়, কিন্তু তা নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে। যে ধারণা দেওয়া হয় যে সাধারণ মানুষ সংস্কার চায় না, সেটা ভুল। আমরা মাঠপর্যায়ে গিয়ে দেখেছি—যারা সংস্কার করে নির্বাচন চায়, তারাই আবার দ্রুত নির্বাচন চায়। পুলিশ সংস্কারে কোনো অগ্রগতি হয়নি, স্বাধীন পুলিশ কমিশন হবে কি না তা নিয়েও দ্বিধা রয়েছে। অর্থনীতি ও শিক্ষা খাতেও প্রয়োজনীয় সংস্কার হয়নি।”

নির্বাচন প্রসঙ্গে দুই গবেষকই বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা কমেছে। নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পরে বাস্তবায়িত হয় না—এ কারণেই অনেকে নির্বাচনের আগে সংস্কার দেখতে চান না। জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ মানুষ পরে নির্বাচন চায়, বাকিরা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে।

আগামী নির্বাচনে ভোটদানের প্রসঙ্গে আসিফ শাহান জানান, “অক্টোবরে যারা বিএনপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাদের অনেকে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। পদযাত্রার পর এনসিপিকে ভোট দেওয়ার সমর্থন কিছুটা বাড়তে পারে।”

গবেষণার সার্বিক ফলাফলে উঠে এসেছে—জনগণের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনের আয়োজন নয়, বরং আইন-শৃঙ্খলা, অর্থনীতি, দুর্নীতি দমন ও শিক্ষা খাতে বাস্তব পরিবর্তন দেখতে চায় তারা। নির্বাচনের আগে এসব খাতে কার্যকর সংস্কার বাস্তবায়নই জনগণের আস্থার মূল শর্ত হয়ে উঠেছে।


আমার বার্তা/এমই