গায়েবি মামলা অর্থনীতিতে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে: হোসেন জিল্লুর

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ১১:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

গায়েবি মামলার সংস্কৃতি দেশের পুরো ব্যবসায় পরিমণ্ডলকে এক ধরনের গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।

রোববার (২২ জুন) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সিপিডির বাজেট সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পরশু চট্টগ্রাম থেকে একজন জানালেন, তাঁর নামে আরেকটা মামলা হয়েছে…হত্যা মামলা। ১১০ জন আসামি, উনি ৯৫ নম্বর। এভাবে গায়েবি মামলা হওয়ায় কে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, সেটি আলাদা করতে পারছি না। আমরা একটা ‘ব্ল্যাঙ্কেট সাসপিশন’র (সামগ্রিক সন্দেহ/একজনের অপরাধে সবাইকে সন্দেহ) পর্দা পুরো সমাজের ওপর ঢেলে রেখেছি। এ অবস্থায় সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকা ও ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের রেগে যাওয়ার সময় হয়েছে। এটি অযৌক্তিক রাগ নয়। আমি এটাকে বলব পবিত্র রাগ। যে রাগের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করতে হয়। এখন ওই রেগে যাওয়ার মুহূর্ত হয়েছে। কারণ এই সরকারের মধ্যে একটা “পিকুলিয়ার সিনড্রোম”(উদ্ভট লক্ষণ) দেখতে পাচ্ছি। আমি বলব, একটি নতুন ধরনের কুম্ভকর্ণ “সিনড্রোম”, শোনে কিন্তু সাড়া দেয় না।’ বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়, পুরো সরকার ব্যবস্থাকেই কাজ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে হবে না বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাজেটে বড় কোনো সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ জরুরি। অনেকে বলছেন বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। তারপরও কেন গতানুগতিক বাজেট হলো। আমি মনে করি উপদেষ্টা পরিষদের সবাই অর্থনীতিবিদ হলেও ব্যতিক্রম কিছু হতো না। কারণ বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে যে সাহস দেখাতে হয়, সেটির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, শুধু আকারে ছোট হয়েছে, এদিক থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি ব্যতিক্রম। বাজেটে মানুষের জন্য যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপের আলোচনা নেই। সার্বিকভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে বাজেট।

এসব বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটটি আগামী ছয় মাস পরে মধ্যবর্তী পর্যালোচনা করার প্রস্তাব দেন তিনি।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, ‘আমরা অনেক অস্বস্তিকর সময় পার করছি। বর্তমানে আমরা দেখছি খুব সুন্দর সুন্দর মডেল তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে একটা মডেল হচ্ছে, কেউ লুট করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই লুটের টাকা আবার ব্যাংকে পৌঁছে দিয়ে আসে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে, আর আমরা তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি চড়া সুদহার দিয়ে। আমার থেকে আপনি (সরকার) বাড়তি টাকা নিয়ে এই চুরির টাকার ভর্তুকি দেবেন, এটা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটা ব্যাংকের কর্মকর্তার জেল হয়নি, একজন গ্রাহকেরও (দোষী) জেল হয়নি। কারণ, যার কাছে টাকা, যে যত বড় চোর, সে তত বড় স্বচ্ছ—এটাই আমরা প্রতিফলন দেখছি।’

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এনামুল হক খান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, সোশ্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার।


আমার বার্তা/জেএইচ