রাখাল রাহাকে এনসিটিবির কারিকুলাম কমিটি থেকে অপসারণের দাবি

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৪:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ধর্মীয় কটুক্তিতে আঘাত, কারিকুলাম বিতর্ক করা ও সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নাম ব্যবহার করায় বিতর্কিত লেখক রাখাল রাহা অরফে সাজ্জাদুর রহমানকে এনসিটিবির কারিকুলাম কমিটি থেকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর। এ সময় তিনি ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন।

লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবির চেয়ারম্যান বিতর্কিত রাখাল রাহাকে নিয়ে দায়সারা বক্তব্য দেয়ায় তার প্রতিবাদে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। গত স্বৈরশাসকের আমলে চালু করা গণবিরোধী নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল আপোষহীন লড়াইয়ের। ২০২৩ সালে শুরু করে দীর্ঘ সংগ্রামের এই পথ পাড়ি দিতে আমাদেরকে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

ন্যায়ের পক্ষে থেকেও আমরা তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েছিলাম। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমাদের অনেকে জেল খেটেছি। আন্দোলনের শুরুটা দুএকজন করলেও পরবর্তীতে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। আমাদের আন্দোলনটি কোন একক ব্যক্তির ফসল নয়। আমরা আন্দোলনে সম্মিলিতভাবে লড়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের নামকরণও হয়েছিল সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সংবাদ সম্মেলনে রাখাল রাহাকে শুধুমাত্র লিখিত বক্তব্য প্রদান করতে দেয়া হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে দেওয়া হল পরবর্তীতে তিনি এই আন্দোলনে তাকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে গুম হওয়া, গ্রেফতার হওয়ার ভয় দেখিয়ে তার অফিসে ডেকে আগের কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে বলেন। আগের কমিটির ১১ জনের মধ্যে মাত্র দুজনের উপস্থিতিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে মেজোরিটির তোপের মুখে কমিটি স্থগিত করা হয়।

সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবীর ও কাজী সাইফুল হক পনিরকে এনসিটিবির দায়ের করা মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের সঙ্গে আরও গ্রেফতার হয় আবুল হাসনাত ও গোলাম রাব্বি।

আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেয়ায় মডারেটর তাপসী তাজ খানকে গ্রেফতার করার অভিযান চালায় ২৩ নভেম্বর। ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এক সময় নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে এবং সচেতন অভিভাবক সমাজের ব্যানারে এডভোকেট মুসলিম বিন হাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন চলতে থাকে। এই সময় রাখাল রাখার কোন ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনি।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে তিনি এনসিটিবির পাঠ্য পুস্তক পরিমার্জন কমিটির সদস্য সচিব নিযুক্ত হোন এবং এনসিটিবিতে একক আধিপত্য কায়েমের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী গ্রাফিতি, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা বইয়ের পিছনে ছাপা, টেন্ডার ক্যালেংকারী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করতে থাকেন।

রাখাল রাহা আমাদের সঙ্গে শেষ দিকে যুক্ত হলেও তিনি উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা পালন করেননি। কিন্তু তিনি ঐতিহাসিক এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন যা শুধু আমাদের সঙ্গেই না, পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর কবীর।

তিনি বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবি চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, রাখাল রাহার নেতৃত্বে অভিভাবকরা আন্দোলন করেছেন এবং সে কারণেই শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হয়েছে। তার এই বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক। এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি এবং আমরা মনে করছি বিতর্কিত রাখাল রাহাকে জাতির নায়ক বানিয়ে এনসিটিবি তাদের ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং অনিয়ম আড়াল করতেই এই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা এনসিটিবির চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমে ক্ষমা চাইতে হবে।

এ সময় তিনি ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- রাখাল রাহাকে এনসিটিবির সকল কমিটি থেকে অপসারণ করে গণমাধ্যমে স্পষ্ট বিবৃতি দিতে হবে ও তাকে হিরো বানিয়ে ভবিষ্যতে কোনরূপ পুনর্বহাল করা যাবেনা এবং তার মতো বিতর্কিত কাউকেই এনসিটিবির পরিমার্জন বা সংস্কার কমিটিতে যুক্ত করা যাবে না; ২০২৩ সালে দায়ের করা মামলা থেকে আমরা অব্যাহতি পেয়েছি। কিন্তু জব্দ করা মালামাল ও ফেসবুক আইডি ফেসবুক আইডি ফেরত পাই। এগুলো দ্রুত ফেরত দিতে হবে; প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবিলম্বে মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; পরিমার্জন কমিটি থেকে কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন তার দালিলিক প্রমাণ দিতে হবে; পাঠ্যপুস্তক মূদ্রণে ওভার প্রাইসিং রেটে প্রেসগুলিকে কাজ দিয়েছে এবং এনসিটিবির সিন্ডিকেট কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ এসেছে তার তদন্ত করতে হবে; পত্রিকায় এসেছে, ৪০টি মূদ্রণ প্রতিষ্ঠান সিঙ্গেল বিডার হওয়ার পরও তাদেরকে কোনোরুপ কম্পিটিশন না করিয়ে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কাজ দিয়ে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতি করেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে; অবিলম্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করে যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দেশীয় মূল্যবোধের আলোকে কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে এবং ইউনেস্কোর পরামর্শ, দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে যে সমস্ত স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখনও বই পাইনি সেই বইগুলো দিতে হবে। অন্যথায় এনসিটিবি ঘেরাও করা হবে।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কাজী সাইফুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, জেসমিন, ডা. রিপা, তানিয়া আক্তার, কামাল হোসেন প্রমুখ।


আমার বার্তা/এমই