এতদিন দেশ যেভাবে চলেছে আগামীতে আর সেভাবে চলবে না: রিজওয়ানা

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৯:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এলেই দেশ ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে যাবে। অনেক সময় আমরা মিথ্যা মামলায় মানুষকে ফাঁসিয়ে দিই বা মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেছে জেনেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে লোকটাকে আমরা মুক্ত করি না। এতদিন বাংলাদেশ যেভাবে চলেছে আগামীতে বাংলাদেশ আর সেভাবে চলবে না।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় মিলনায়তনে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক’ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও প্রসিকিউটরদের উদ্দেশ্য করে উপদেষ্টা বলেন, দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে যদি আপনারা সকলে আমাদের সঙ্গে থাকেন। আর যদি সেটা না হয়, আমরা সম্মিলিত প্রয়াস করতে না পারি তাহলেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, কিন্তু পথটা হবে অনেক বেশি সংঘাতময়। আমরা সকলের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করব।

তিনি আরও বলন, কোর্টে যখন আমরা প্র্যাকটিস করি তখন শুনি যে এই বিচারপতি অমুক দলের। যখন আমরা (আইনজীবী) ক্যারিয়ার শুরু করি তখন ভাবতেও পারিনি যে এরকম কথা শুনতে হবে। প্রথমে আমাদের মেনে নিতে হবে যে পারফেক্ট সিস্টেমে দেশটাকে কখনও চালাতে পারিনি। এখনো যে পারফেক্টভাবে চলবে, দেশের আইনকানুন বা ব্যবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে ওরকম না।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, আপনি যখন পরিবেশ ব্যবস্থাপনার কথা বলেন, ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন, বালু খেকোদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তখন আপনার জন্য কোনোভাবেই পরিবেশ রোমান্টিক অ্যাজেন্ডা থাকে না। এটা আপনার আমার বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দয়া করে পরিবেশ অপরাধকে হালকাভাবে নেবেন না, এটা কঠিন অপরাধ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে এটা কঠিন অপরাধ। পরিবেশ সুরক্ষা আইনের ৪ ধারায় বলা আছে পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কোনো সরকারি সংস্থা সেটা পুলিশই হোক, ডিসিই হোক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য চায় তবে তারা তা দিতে বাধ্য। শুধু শুনছি গো স্লো, গো স্লো। আমি আর কত স্লো যাব। আমাকে তো বনভূমি দখল হয়ে যাওয়া সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়া কৃষিজমির মাটি কেটে যেন ইটভাটায় দেওয়া না হয় সেই বিষয়টাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্য করে রিজওয়ানা বলেন, পলিথিন একটি নিষিদ্ধ পণ্য। ২০২২ সাল থেকে এটা এমনভাবে আমরা ব্যবহার করছি যে এটা মানুষের ব্রেইনে চলে গেছে। উন্নত প্রায় সব দেশে এক ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল বাদ দিয়ে দিয়েছে। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ পণ্য তাই আপনারা ক্রাশ প্রোগ্রাম করে আগামী তিন মাস প্রতি এক সপ্তাহে বাজারগুলোতে ও যেখানে যেখানে পলিথিন উৎপাদন করা হয় সেখান থেকে আপনারা পলিথিনগুলো বাজেয়াপ্ত করে নেন। পলিথিন উৎপাদনের জায়গাগুলো আপনারা বন্ধ করে সিল করে দেন। এটা দেশের আইন, এটা ডিসি হিসেবে আপনার কর্তব্য। পুলিশ হিসেবে এটা আপনার কর্তব্য। এর বিরুদ্ধে কেউ আদালতে গেলে উল্টো তার বিরুদ্ধে আইন তুলে ধরে দাঁড়ানো হচ্ছে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আইজিপি বাহারুল আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভাইজর অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি। কর্মশালায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারকবৃন্দ, পাবলিক প্রসিকিউটর, থানার অফিসার ইনচার্জরা অংশ নেন।



আমার বার্তা/এমই