সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সঙ্গে মামলাও বাতিল হবে: আইন উপদেষ্টা
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে এ আইনের অধীন সব হয়রানিমূলক মামলা রহিত হবে। তবে কম্পিউটার অফেন্স বা কম্পিউটার হ্যাকিং সম্পর্কিত মামলাগুলোর বিচার অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘ডিআরইউ-দেশ টিভি বেস্ট রিপোর্টিং এ্যাওয়ার্ড -২০২৪’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এর অধীনে যত হয়রানিমূলক মামলা রয়েছে, এই অ্যাক্টটা যখন বাতিল করব, তখন সব মামলা রহিত (বাতিল) হয়ে যাবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের গ্রুপিং নাই জেনে অধ্যাপক আসিফ নজরুল সংগঠনটির প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এই ডিআরইউ যেন কখনো দুই গ্রুপে বিভক্ত না হয়। আর স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এখানেই বোধহয় একমাত্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। অনেক সাংবাদিক নেতা আছেন, যারা সাংবাদিকও না নেতাও না তারা সাধারণ সাংবাদিকদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি ও ক্ষমতার মালিক হয়েছেন। এ সব মুখ চেনা ব্যক্তিকে (সাংবাদিক) কখনো ডিআরইউ'র নেতৃত্বে আসতে দিবেন না। কারণ তারা সাংবাদিকদের দুঃখ-কষ্ট বুঝবে না। তারা সাগর রুনি হত্যার বিচারের আন্দোলন করতে করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হতেও তাদের লজ্জা করেনি।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমাদের সরকারের (অর্ন্তবর্তী সরকারের) পক্ষ থেকে কোন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আমাদের সরকার মামলা করেনি। কিন্তু যারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করে আন্দোলনকারীদের শক্তভাবে দমনের কথা বলেছিল সাধারণ জনগণ বিশেষ করে যারা পরিবার ও সন্তান হারিয়েছে তারা মামলা করেছে। পেশাগত পরিচয়ের বাইরে আমরা যেন অন্য কিছু না হয়ে যাই।
ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রকাশ্যভাবে সমর্থন করে তাকে কী সাংবাদিক বলা যায়? এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেউ যদি গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, অবৈধ নির্বাচনকে অব্যাহতভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন করে, এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। তবে বেশিরভাগ সাংবাদিক সত্য ও ন্যায়ের পথে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গণতন্ত্র ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরপেক্ষ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা অপরিহার্য। আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাংবাদিকতা যদি নির্ভীক ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে দেশে গণতন্ত্র বলেন, আর পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামই বলেন, কোনোটিই সফল হবে না।
গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন. এ কমিশনের মাধ্যমে যেন সাংবাদিকরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন এবং জনসাধারণ উপকৃত হন।
ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং এ্যাওয়ার্ড পেলেন যারা
এবার প্রিন্ট, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও, সবার জন্য উন্মুক্ত মাধ্যমে ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং এ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় ১১ জনকে।
প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান নয়ন, দ্বিতীয় পুরষ্কার আহসান হাবিব রাসেল, তৃতীয় পুরস্কার যুগ্মভাবে জসিম উদ্দিন হারুন ও ফারহান ফেরদৌস। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন মুহাম্মদ আরাফাত মোমেন আদিত্য, দ্বিতীয় পুরস্কার পান মাসুদ মোস্তাহিদ, তৃতীয় পুরস্কার পান পারভেজ নাদির রেজা।
অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পান ইয়াসির আরাফাত রিপন, দ্বিতীয় পুরস্কার পান মো. জোবায়ের হোসেন, তৃতীয় পুরস্কার পান মো. তৌহিদুজ্জামান তন্ময় এবং সবার জন্য উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করেন আবু সালেহ রনি।
অনুষ্ঠানে জুরিবোর্ডের সদস্যরা ছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ সাবেক সভাপতি শফিকুল কবির সাবু, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী।
ডিআরইউ সভাপতি শুকুর আলী শুভ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন এবং সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ।