খলীকুজ্জামান

দুর্নীতি রোধে আমাদের নীতি আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেছেন, দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই বাধাগ্রস্ত করে না, বৈষম্য ও দারিদ্র্যকেও বাড়িয়ে দেয়। দুর্নীতির প্রধান কারণ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। দুর্নীতি রোধে আমাদের নীতি আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর গুলশানের এক‌টি হোটেলে বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনাসমূহ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, আমরা বলার সময় ঠিকই বলছি যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের বেলায় তার প্রয়োগ নেই। ফলে একজন দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং তাকে দেখে আরেকজন দুর্নীতি করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই আজ দুর্নীতি এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এই দুর্নীতিবাজদের রুখতে সরকারকে দুষ্টচক্রকে (সিন্ডিকেট) চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওয়াত আনতে হবে, মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। সব নাগরিকের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও দেশের ন্যায়সংগত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজের মূল ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়। এই মহামারি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

মিজানুর রহমান ব‌লেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে তার এক ভাষণে বলেছিলেন, এই বাংলার কৃষক ও শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না, দুর্নীতি করে শিক্ষিত ব্যক্তিরা। আমরাই এই শিক্ষিত সমাজের অংশ। সুতরাং আমাদের উচিত দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে তাদের শাস্তির সম্মুখীন করা। এতে করে আইনের সুশাসন যেমন প্রতিষ্ঠা হবে, তেমনি বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক, চাষি ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এই দুর্নীতিবাজদের জায়গা হতে পারে না।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিনি তার বক্তব্যে ড. ইউনূসের দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের অবকাঠামো, লোকবল ও সুনাম ব্যবহার করে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনুমোদন ব্যতিরেকে তার একান্ত অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন করে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার বলেন, উক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোনও সুবিধা পাচ্ছে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র ঋণ গ্রহীতাদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত। তিনি একদিকে সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলছেন, অন্যদিকে দরিদ্র জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি যেই করুক না কেনো, তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। কোনও ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করেছে মানবাধিকার সংস্থা এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপল (এলকপ)।


আমার বার্তা/এমই