বাবা-মা,পুত্র-কন্যা ও মালিককে খাবার পর উচ্চবংশের ছাগলটি আর কী কী খাবে

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ১৪:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কথায় আছে, ‘ছাগলে কী না খায়!’ এ নিয়ে বিস্তর রসিকতাও আছে। কাউকে নির্বোধ বলতেও ‘ছাগল’ শব্দটির বহুল ব্যবহার আছে। একে অবলা প্রাণী, তায় আবার ‘নির্বোধ’–এর প্রতীক, ফলে তার খাদ্যতালিকা নিয়ে রস–রসিকতা করতে বাঙালির কখনো বাধেনি। কাঁঠালপাতা থেকে কোমলপানীয়—সবই আছে এর খাদ্যতালিকায়। তবে এ তালিকায় যে রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অ্যাগ্রো ফার্ম পর্যন্ত থাকতে পারে—তা অতি কল্পনাবিলাসীর সুদূর কল্পনাতেও ছিল না। সেটাই দেখিয়ে দিল বাঁকা সিংয়ের ছাগলটি।

কী বিপাকেই না ফেলেছে ছাগলটি। কথায় আছে—হাজার টাকার বাগান খাইল এক টাকার ছাগলে। কেউ অবশ্য পাঁচ সিকাও বলে। তো পাঁচ সিকা বা এক টাকার ছাগল যদি হাজার টাকার বাগান খেতে পারে, তাহলে ১৫ লাখের ছাগলের কোটি টাকার বাগান খাওয়াটা তেমন কিছু নয়। এটা নিতান্তই ইনফ্ল্যাশনের ব্যাপার। গুরুগম্ভীর অর্থনীতিবিদেরা এ নিয়ে কথা বলতে পারেন। তাঁদের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে বরং প্রিয় ছাগলটির দিকে তাকানো যাক।

অন্যসব ছাগল থেকে একটু কি আলাদা নয়? কেমন রাজকীয় ব্যাপার আছে তার বসে থাকা, কাঁঠালপাতা চিবোনোর ভঙ্গি ও দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে। আহা, আসলেই উচ্চবংশের!

শুরুতে তার দাম শুনে হেঁচকি ওঠা লোকেদের সামলে উঠতে টোটকা হিসেবে এল এর বংশলতিকার বিষয়টি। উচ্চমূল্যের বাজারে মাত্র ১৫ লাখ দাম শুনে মানুষও বসে গেল এই উচ্চবংশের খোঁজখবর নিতে। কী ছোট মন!

সে যাক, শুরুর সেই ধকল গেল, ঈদ গেল, তারপর আবারও সিনে ঢুকে পড়ল ছাগলটি। কেউ কোনোভাবেই এই সিন কাট করতে পারছে না। রীতিমতো অনুসন্ধানী ভঙ্গিতে ঢুকে গেল মুশফিকুর রহমান ইফাতের পরিবারে। শুধু কি ঢুকল? একেবারে ভজঘট পাকিয়ে দিল।

মুশফিকের বাবা মতিউর রহমানের পরিচয় মিলল। কিন্তু সন্তানের পরিচয় অস্বীকার করে বসলেন মতিউর। রীতিমতো গৃহবিবাদ বলা চলে। এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কথা বলতে শুরু করলেন। শেষে জানা গেল—মুশফিক তাঁর ছেলেই। যাক ঝামেলা মিটল তবে।

কিন্তু না। ছাগলটির মনে আরও কিছু ছিল। সে যে অভিযানে নেমেছে! তার অভিযানে মতিউরের আয়কর নথির ২০ কোটি টাকার অঙ্ক শতকোটি ছাড়াল। দেশে–বিদেশে বিচিত্র সব প্রাসাদ ও শিল্পকারখানা, আরও কত কী যে সামনে চলে এল। যাদের আগ্রহ আছে, নিজ দায়িত্বে দেখে নিন।

কোটি টাকার গরু আর লাখ টাকার ছাগলের কারণে সম্প্রতি আলোচনায় আসে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ।

এখানেই শেষ নয়। সাদিক অ্যাগ্রোতে বসে থাকা ছাগলটির প্রভাবে আলোচনা উঠল এমনকি জাতীয় সংসদেও। ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মাহবুবুল আলম হানিফ দুর্নীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বক্তব্য দিলেন সংসদে। সেখানে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুললেন যে, ‘১ কোটি টাকায় গরু বিক্রি হয় কীভাবে, কারা কেনে?’ অঙ্কের হিসাব দিয়ে প্রশ্ন রাখলেন, ‘উচ্চমূল্যের গরুটির কেজিপ্রতি মাংসের দাম পড়েছে ৭০০০ টাকার বেশি।’ চোখ কপালে উঠে গেল অনেকের। শুধু তাই নয়, তিনি প্রশ্ন তুললেন, সরকারি কর্মচারী সুরক্ষা আইন–২০১৮ নিয়েও। তাঁর ভাষ্যে—এই আইন অপরাধী সুরক্ষা আইন হিসেবে বিবেচিত। এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

জমে উঠল রাজনৈতিক অঙ্গন। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দই দুর্নীতি প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষ্য দিতে থাকলেন। কিন্তু ছাগলটি তখনো বসে থাকল না। এবার সে নামল খাল উদ্ধারে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যা দেখেও দেখছিল না এতদিন, বাঁকা সিংয়ের ক্যারিশমায় তাও দেখিয়ে দিল ছাগলটি। সে জানিয়ে দিল—উচ্চবংশীয় ও অভিজাত গবাদি পশু উচ্চমূল্যে বেচে একটা অবস্থান তৈরি করা সাদিক অ্যাগ্রোর অবস্থানই আসলে নড়বড়ে। দারুণ দক্ষতায় খালের জায়গা দখল করে তারা তাদের খামারটি গড়ে তুলেছে। শুরু হলো উচ্ছেদ অভিযান। আড়ালে গেলেন খামারটির মালিক। প্রশ্ন উঠল, সরকারি সংস্থাগুলো তাহলে এতদিন কী করেছে?

কিন্তু এ ছাগল তো বড় কামেল। এ তো একদিকে নজর দিয়ে বসে থাকা ছাগল নয়। আলোচনায় আসা মতিউরের কর্মস্থল এনবিআরে নজর গেল দুদকের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুঁজে পেল এবার ফয়সাল সাহেবকে, যার বিরুদ্ধে কিনা হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ।

পাওয়ারটা দেখুন! ১৫ লাখ থেকে কোটি, কোটি থেকে শতকোটি, এবার কিনা হাজার কোটি। তার খাদ্যতালিকায় একের পর এক ঢুকে পড়ছে রিসোর্ট, প্রাসাদোপম বাড়ি, অত্যধিক দামের গাড়ি, এনবিআরের অন্দরমহলে বসে থাকা ছুপা রুস্তমেরা, সরকারি কর্মচারী সুরক্ষা আইন, সিটি করপোরেশনের নিস্পৃহতা, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি। ‘ইত্যাদি’ দুবার বলতে হলো। কারণ, ছাগলটি এখন বাস্তুচ্যুত হলেও বেশ ভালোভাবেই জ্যান্ত। তার দৃঢ় ও ঋজু ভঙ্গির ছবিগুলো বলে দেয়, এখনো অরুচি ধরেনি। ফলে তার খাদ্যতালিকায় আর কী কী ঢুকে পড়বে কেউ জানে না।

সবশেষে একটা অনুরোধ—‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ বা সংক্ষেপে ‘গোট’ প্রশ্নে লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ছবির সাথে যদি কোনো প্রতীকী ছাগলের ছবি দিতেই হয়—এই ছাগলটিরই দিন। এমন স্মার্ট ছাগল আর পৃথিবীতে আছে কি?

আমার বার্তা/এম রানা/জেএইচ