আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অবসান চায় অ্যামনেস্টি

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ১৭:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও নির্যাতনকারী সদস্যের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতির অবসান চায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার চেয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠনটি।

বুধবার (২৬ জুন) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সংগঠনটি জানায়, ১৯৯৮ সালে নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদ (সিএটি) অনুমোদন এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা সত্ত্বেও বাংলাদেশে নির্যাতনে জড়িত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি অব্যাহত আছে। গত এক দশকেরও বেশি সময়ে সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে মাত্র একটি ঘটনায় অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে মাদক রাখার কথিত মামলায় গত ২ জুন যশোরের অভয়নগরে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে ৪০ বছর বয়েসী আফরোজা বেগম মারা যান। তার বড় ছেলে আরিফ হোসেন মুন্না অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন যে তিনি দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অভয়নগর থানায় নিয়ে যাওয়ার আগে তার মায়ের কাছে মাদকদ্রব্য রাখতে এবং তাকে মারধর করতে দেখেছেন। পরদিন সকালে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মায়ের মৃত্যু হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক গবেষক তাকবীর হুদা বলেছেন, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুরতা ঘৃণ্য কাজ। কখনই এগুলো সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের হাতে ব্যাপক এবং অব্যাহতভাবে নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার অভিযোগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত করতে হবে। সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন সন্দেহজনক কর্মকর্তাদেরও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে হবে, যাতে তারা আবারও কোনও ক্ষতি করতে না পারে।

আফরোজা বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন মুন্না জানান, তাদের বাড়িতে অভিযানের আগে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবারকে হয়রানি করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে তিনি বলেন, ‘দুই পুলিশ কর্মকর্তা চাঁদার জন্য আমাদের হয়রানি করছিল, তারা পরিচিত এক মাদক কারবারীকে নিয়ে মাঝরাতে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমার বাবাকে খুঁজে না পেয়ে তারা আমার মাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, তার চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে অবিরাম থাপ্পড় মারতে থাকে। এরপর তারা আমার মায়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা নেয়। মাদক রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করার আগে মাদক কারবারীর পকেট থেকে ৩০টি ইয়াবা বড়ি তারা আমার মায়ের পোশাকে গুঁজে দেয়। তারা আমার সামনেই মাদক গুঁজে দিয়েছে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নির্যাতন কিংবা ও চুরির মামলা করা না যায়।’

মুন্না বলেন, সকালে থানায় তিনি তার মাকে দেখতে গেলে পুলিশ তাকে খাবার বা ওষুধ দিতে দেয়নি, সকালেই তিনি মারা যান। তাদের নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার কারণে তিনি মারা যান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক গবেষক তাকবীর হুদা বলেন, এটা বিবেকবর্জিত এই জন্য যে এসব নৃশংস অপরাধের জন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ধীরগতির কারণে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশের একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গড়ে তোলা দরকার। বাংলাদেশের উচিত, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুমোদন করা, যাতে বিচার না হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে ভুক্তভোগীরা জাতিসংঘের নিপীড়ন-বিরোধী কমিটিতে সরাসরি অভিযোগ করতে পারে।


আমার বার্তা/এমই