বিশেষ বিসিএস

৩২ বছরের বেশি বয়সী চিকিৎসকদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে নির্দেশ

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

৪৮তম বিশেষ বিসিএসে চিকিৎসকদের মধ্যে থেকে ৩২ বছরের বেশি বয়সীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পিএসসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আদেশ শুধু রিট আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়স ৩২ বছর থেকে ৩৪ বছর কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (০৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব।

চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রিটকারীদের পরীক্ষায় বসানোর জন্য বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে রুলও জারি করেছেন।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদ এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিসিএস ক্যাডারদের বয়স বাড়ানোর দাবি দাওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে আসছে। তারপরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট আবেদন করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি ও নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।

আদেশের বিষয়ে রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব বলেন, বিসিএসে আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা যখন ৩০ বছর ছিল, তখন চিকিৎসকরা (স্বাস্থ্য ক্যাডারে) ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পেতেন। চাকরিপ্রার্থীদের দাবির মুখে সম্প্রতি সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে। অথচ চিকিৎসকদের বয়সসীমা রাখা হয়েছে ৩২ বছরেই।

চিকিৎসকরা এটিকে চরম বৈষম্য বলে মনে করছেন। তারা চিকিৎসকদের আবেদনের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার দাবি তুলেছেন। ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরুর আগেই এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন পরীক্ষার্থীরা।

গত ১৮ নভেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে বিসিএসে যেহেতু আগে চিকিৎসকরা দুই বছর বেশি সময় পেতেন, সেজন্য তারা আশা করেছিলেন বিসিএসে তাদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করা হতে পারে। কিন্তু গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএসে সাধারণ প্রার্থীদের মতো চিকিৎসকদের বয়সসীমাও সর্বোচ্চ ৩২ বছর রাখা হয়। বিষয়টি চিকিৎসকদের বৈষম্যমূলক মনে করছেন।

বিষয়টি নিয়ে সাধারণ এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসক সমাজের পক্ষে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন।

গত ৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করেন তারা। তাছাড়া ৮ ডিসেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যান, ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর কাছেও লিখিতভাবে দাবি তুলে ধরেন।

এদিকে, চিকিৎসকদের দাবি সম্বলিত লিখিত আবেদন পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার বিষয়টি বিবেচনা করতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরপরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট করেন ১০ জন বিসিএস পরীক্ষার্থী। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে চিকিৎসকদের যুক্তিতে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, বিসিএসে আবেদন করতে সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক পাস হওয়ার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে স্নাতক শেষ করতে চার বছর সময় লাগে। অথচ চিকিৎসকদের এমবিবিএস ও বিডিএসে স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে ন্যূনতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর সময় প্রয়োজন হয়।

এজন্য আগের সব বিসিএসে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩০ বছর রাখা হলে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ বছর ছিল। বৈষম্য দূর করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এখন চিকিৎসকদের বয়সসীমা আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৩৪ করা জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

 


আমার বার্তা/এমই