গ্রেনেড হামলার পূর্ণাঙ্গ রায়

সব আসামিকে খালাসের কারণ জানালেন হাইকোর্ট

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বাতিল করে ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এতে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৯ আসামিকেই খালাস দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতিদের সই শেষে ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

যে সব কারণে সব আসামিকে খালাস দেন আদালত

আদালত বলেছেন, হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিচার শুরু হয়েছিল, সেটিই ‘অবৈধ’। এ ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করা হয়নি। এ ছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রটিও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে করায় সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়নি। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ২৫ সাক্ষীর কেউই বলেননি, কে গ্রেনেড ছুড়েছিল বা কেউ ছুড়তে দেখেছেন কিনা। ফলে প্রকৃত খুনি কে, সেটির প্রমাণ নেই। শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিকে সাজা দেওয়া যায় না। এসব কারণে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে রায় ঘোষণার দিন হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো এভিডেনশিয়াল মূল্য নেই। এটি জোর করে নেওয়া হয়েছিল এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি।

এদিকে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল হওয়ার পর মামলাটি পুনর্তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচার নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। তখন আইনজ্ঞরা জানান, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, নতুন করে তদন্ত হলে বিচারের পথ কিছুটা হলেও উন্মুক্ত হবে। এখন দেখার বিষয়, সরকার রায়ের আলোকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়। এখানে অনেক প্রশ্ন আছে। তদন্ত শুরু হলে সেগুলো পরিষ্কার হবে। অর্থাৎ, আবারও ‘জজ মিয়া নাটকের’ অবতারণা করা হয় কিনা, কারা তদন্ত করছে, আসামি হিসেবে কাদের সামনে আনা হচ্ছে– এগুলো দেখার পর বোঝা যাবে কী ঘটতে চলেছে।

আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, ওই ঘটনায় ২৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিচারিক আদালত যাদের দণ্ড দিয়েছিলেন, হাইকোর্টের রায়ে তাদের নির্দোষ বলা হয়েছে। তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কারা, জাতির সেটা জানার দরকার আছে। ন্যায়বিচারের জন্যও সেটা উচিত। এখন দেখার বিষয়, সরকার কী ব্যবস্থা নেয়। আপিল করে কিনা, সেটাও দেখতে হবে।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুই দশক আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও দলটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলটির তিন শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত।

রায়ে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন। আর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪ জনই জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন দণ্ডিতরা।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন-সংক্রান্ত ডেথ রেফারেন্স আবেদন জমা দেয়। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাইকোর্টে নতুন করে এ দুই মামলার শুনানি শুরু হয়। এর পর ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

গতকাল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে হাইকোর্ট ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত দুটি মামলার তদন্ত নতুন করে হওয়া উচিত বলেছেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে মামলা দুটি তদন্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রায়ের অনুলিপি পাঠাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলকারী, যারা কারাগারে আছেন, তাদের অন্য মামলা না থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতেও রায়ে বলা হয়েছে।