ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর পুলিশ, জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে সব সরকারি দফতরে ব্যাপক রদবদল করে। পুনর্গঠন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। বড় পরিবর্তন আনা হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়েও। কিন্তু নিম্ন আদালতে এখনো পরিবর্তন আসেনি।
ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ আইন কর্মকর্তা আদালতের কাজে অংশ নিচ্ছেন না। এতে নিম্ন আদালতে বিচার কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় দ্রুত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও গভার্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকার পক্ষে সারাদেশের মহানগর ও জেলা আদালতগুলোতে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও গভার্নমেন্ট প্লিডার (জিপি)। ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেন পিপি আর দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করেন জিপি। এছাড়াও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত গভার্নমেন্ট প্লিডার, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি), সহকারী গভার্নমেন্ট প্লিডার (এজিপি)রাও এসব আদালতে কাজ করেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রসিকিউটর, ডেপুটি, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বিভিন্ন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু মহানগর ও জেলা আদালতগুলোতে এখনো আইন কর্মকর্তা হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া পিপি-জিপিরাই আছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের আমলেও নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ আইন কর্মকর্তা এখনো কাজে যোগ দেয়নি। দু-একজনকে মাঝেমধ্যে আদালতে দেখা গেলেও রাষ্ট্রীয় মামলায় অংশগ্রহণ করতে তেমন দেখা যায় না। এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শিগগিরই এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কয়েকদিনের মধ্যেই সারাদেশে পিপি-জিপি পদের আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, সুপ্রিম কোর্ট বারসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে আসা এসব পদ প্রত্যাশীদের সিভি যাচাই-বাছাই শেষের দিকে। কেউ কেউ বলছেন সব কিছু প্রস্তুত হয়ে সলিসিটর অফিসে পাঠানো হয়েছে। সামনের সপ্তাহেই ঘোষণা করা হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই পিপি-জিপি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। সূত্রগুলো জানায় ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে আসা সিভিগুলো যাচাই-বাছাই শেষে সলিসিটর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আদালত খুললেই এগুলো ঘোষণা করা হবে।
নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সলিসিটর উইংয়ের উপসলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন বলেন, নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই নিয়োগ হয়ে যাবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন অ্যাটর্নি জেনারেলসহ মোট ১৭৪ জন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ৫০ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ৯৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে যথাক্রমে ৩৭ ও ২৩ জন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে মোট ২১ জন এওআর (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোতে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ৬৪ জন জিপিসহ মোট ৭০০ আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জিপি, এজিপি ও এলজিপি), রাষ্ট্রপক্ষে ফৌজদারী মামলা পরিচালনার জন্য ৬৪ জন পিপিসহ মোট ২৫২০ জন আইন কর্মকর্তা (বিশেষ পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নোবেল জয়ী ড. মুহম্মাদ ইউনূস। এরপর সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল, তিন জন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৭৫ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, ১৬১ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ২৪০ জনকে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সারাদেশে পিপি ও জিপি পর্যায়ে এখনো রদবদল করেনি সরকার।
আমার বার্তা/জেএইচ