লাইক বাটন বদলে দিচ্ছে যোগাযোগ আর অনুভূতি প্রকাশের ধরন

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ১৭:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

‘লাইক’ বাটন—একটি ছোট্ট থাম্বস-আপ চিহ্ন, যা একসময় ছিল শুধু পছন্দ জানানোর প্রতীক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাটন বদলে দিয়েছে আমাদের অনলাইন যোগাযোগের ধরন, অনুভূতি প্রকাশের ভাষা এবং ডিজিটাল দুনিয়ার ব্যবসার ভিত্তি।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘লাইক : দ্য বাটন দ্যাট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি বই, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে—কীভাবে এই সাধারণ বাটনটি সামাজিক যোগাযোগের বিশাল প্রভাবক হয়ে উঠেছে।

২০০৫ সালের ১৮ মে, ইয়েল্প নামের এক রিভিউ সাইটের কর্মী বব গুডসন একটি স্কেচ করেন—একটি থাম্বস-আপ ও একটি থাম্বস-ডাউন চিহ্ন। উদ্দেশ্য ছিল, ব্যবহারকারীরা যেন সহজে রেস্টুরেন্ট রিভিউতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।

ইয়েল্প যদিও এই আইডিয়া গ্রহণ করেনি, তবে একই সময়ে গুগল, ইউটিউব ও টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে রিঅ্যাকশনের সহজ উপায় খুঁজছিল। এই সম্মিলিত চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় ‘লাইক’ বাটনের ধারণা।

প্রথমদিকে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ‘লাইক’ বাটনের পক্ষে ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, এতে ফেসবুকের গুরুত্ব হালকা হয়ে যেতে পারে। তবে ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, নানা আলোচনা-সমালোচনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এটি চালু করা হয়।

এরপর থেকে ‘লাইক’ বাটন হয়ে ওঠে ফেসবুক কনটেন্ট অ্যালগরিদম, বিজ্ঞাপন এবং ব্যবহারকারীর আগ্রহ বিশ্লেষণের মূল মাধ্যম। বর্তমানে মেটা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন থেকেই আয় করছে বছরে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার!

ফেসবুকের পর ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারসহ সব বড় প্ল্যাটফর্মেই লাইক বা সমমানের বাটন যুক্ত হয়। ২০১৬ সালে ফেসবুক আরও ছয়টি রিয়েকশন (লাভ, কেয়ার, হাহা, ওয়াও, স্যাড, অ্যাংরি) যুক্ত করে।

এই ছোট ক্লিকগুলোই ঠিক করে দেয় কোন কনটেন্ট বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে, কোন পোস্ট ভাইরাল হবে। এটি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট অপ্টিমাইজেশনের অপরিহার্য হাতিয়ার।

তবে সবকিছুই যে ইতিবাচক তা নয়। অনেক কিশোর-কিশোরী কম লাইক পাওয়ার কারণে হতাশায় ভোগে। অনেকে লাইক না পেয়ে নিজেদের মূল্যায়ন নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে।

লাইক বাটনের উৎপত্তির ইতিহাস আরও পুরনো। রোমান যুগের গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ থেকে শুরু করে ‘হ্যাপি ডেজ’ টিভি সিরিজে ফনজি চরিত্র পর্যন্ত—পছন্দ প্রকাশে থাম্বস-আপ ব্যবহৃত হয়েছে বহুবার।

বইটির সহলেখক মার্টিন রিভস বলেন, “লাইক বাটন আমাদের সেই প্রাচীন মানসিক চাহিদাকেই ছুঁয়ে যায়—আমরা চাই কেউ আমাদের পছন্দ করুক, বুঝুক এবং পাশে থাকুক।”


আমার বার্তা/এল/এমই