পেশাগত জীবনে সবচেয়ে সুখী নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ১৫:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ছোট-বড় যে কোনো সংস্থা বা কোম্পানিতে কাজের চাপ ক্রমবর্ধমান। কর্মজীবনের প্রবল চাপ প্রভাব ফেলছে ব্যক্তিগত ও সাংসারিক জীবনেও। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা একটানা কাজ করার পর বাড়ি ফিরে আবার ল্যাপটপে ঘাড় গুঁজে বসে থাকা। মুখ তুলে তাকানোর ফুরসত নেই, বাড়ির মানুষদের সঙ্গে দু’দণ্ড কথা বলারও সুযোগ নেই। কাজের চাপে নাভিশ্বাস অবস্থা।
গোটা দিন হাতে থাকলেও তার মধ্যে কাজ শেষ করাটা অনেকের কাছেই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র বাংলাদেশ কিংবা আশেপাশের দেশের নয়, বিশ্বের বহু দেশেই সমস্যাটি ক্রমবর্ধমান। কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য রাখার ক্ষমতা থাকছে না বেশির ভাগেরই। পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠছে বর্তমান প্রজন্মের।
আট ঘণ্টার ‘ডিউটি আওয়ার্স’, সে তো শুধু খাতায়কলমে, বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় না বললেই চলে, এমনটাই অভিযোগ চাকুরিজীবীদের। অতিরিক্ত কাজের চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন দেশের বহু বেসরকারি সংস্থার লক্ষ লক্ষ কর্মী। অফিসে ঢোকার সময় নির্ধারিত থাকলেও বেরোনোর সময়ের ঠিক থাকে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।
কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য, অর্থাৎ ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স’ কোন দেশে কতখানি তা নিয়ে চলতি বছর (২০২৫ সালে) একটি বিশ্বব্যাপী সমীক্ষা চালানো হয়েছে। ‘রিমোট’ নামের একটি সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কোন দেশ কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের সমতা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রাসিসকোর এই সংস্থাটি মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে নানা সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা বলছে, আজকের যুগে দাঁড়িয়ে এই ভারসাম্য কেবল কাজ এবং সময় ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে না। বরং আপনি বিশ্বের কোন দেশে কাজ করছেন তার ওপরও নির্ভর করে। কিছু দেশে কর্মীদের কাজের সময়কে অনেকটাই নমনীয় করে তোলা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে এমন সব বাড়তি সুবিধা, যার ফলে কাজের গুণগত মান বেড়েছে লক্ষণীয়ভাবে।
করপোরেট কোম্পানিগুলোতে কাজের পরিবেশ বদলের জন্য অনেকেই সুর চড়াতে শুরু করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে বিস্তর লেখালিখি। কর্মীদের ব্যক্তিগত কাজ, পরিবার এবং বিনোদনের জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ কর্মীদের সেই সমস্ত সুযোগ দিয়ে তাদের সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নীত করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু কাজের পরিমাণ নয়, কাজের গুণগত মানকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে বহু দেশ। চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেই তালিকায়, যে সব দেশ কর্মীদের ওপর থেকে অতিরিক্ত কাজের চাপ কমিয়ে ব্যক্তিগত জীবন এবং কাজের জগৎকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে অনেকটাই।
তালিকায় কার কোথায় অবস্থান
সমীক্ষা অনুসারে নিউজিল্যান্ড এই তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে। শুধু এই বছর নয়, গত তিন বছর ধরে এই দেশের সংস্থাগুলো কর্মভার কমিয়ে কর্মজীবীদের জন্য দুর্দান্ত পরিষেবা দিয়ে আসছে। চলতি বছর ন্যূনতম বেতন সামান্য বৃদ্ধি করেও অন্যান্য দেশের থেকে ১০ পয়েন্ট বেশি পেয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটি।
এখানে কাজ করতে এলে বছরে মেলে ৩২টি ছুটি। ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৮৮.৬ পয়েন্ট অর্জন করেছে এই দেশটি। কর্মীদের অধিকার এই দেশে সুরক্ষিত এবং তারা তাদের কাজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। কর্মীদের জন্য বরাদ্দ ছুটি, সঠিক বেতন কাঠামো ও কম কাজের সময়— এই তিনটি বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য তথাকথিত উন্নত দেশকে পিছনে ফেলে দিতে পেরেছে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি।
এই তালিকায় পরপর সাতটি স্থান দখল করে রেখেছে ইউরোপের সাতটি দেশ। আশ্চর্যের বিষয়, এশিয়ার কোনো দেশ এই তালিকায় উঠে আসতে পারেনি। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আয়ারল্যান্ড। আইরিশ সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের কর্ম নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ফলে কর্মসংস্থানে স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়েছে। ৮১.১৭ পয়েন্ট পেয়েছে আয়ারল্যান্ড।
সপ্তাহে ৩৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয় বেলজিয়ামের কর্মীদের। সপ্তাহে ৬ দিনের কাজের হিসাব ধরলে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম কাজ করলেই চলে। বেকারত্ব বেশ কম সেখানে। কাজ ও বিশ্রামের মধ্যে সীমারেখা মেনে চলার চেষ্টা করতে উৎসাহ দেওয়া হয় চাকুরিজীবীদের। তালিকার তিন নম্বরে উঠে এসেছে দেশটি। ৭৬ পয়েন্ট পেয়েছে বেলজিয়াম। এখানে মাতৃত্বকালীন এবং পিতৃত্বকালীন ছুটি ও বেতন ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
বেলজিয়ামের বাসিন্দারা ছুটির সময়কে প্রাধান্য দেন সবচেয়ে বেশি। মধ্যাহ্নভোজকে তারা অনুষ্ঠানের মতো মনে করেন। ডেস্কে বসে দ্রুত খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা সেখানে অনুপস্থিত। কোনো গুরুতর কারণ ছাড়া সপ্তাহান্তে কর্মীদের বসের সঙ্গে যোগাযোগ করা আইনবিরুদ্ধ।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে জার্মানি। তাদের পয়েন্ট বেলজিয়ামের চেয়ে মাত্র ১.২৫ কম। এখানকার কর্মীরা বছরে ৩০ দিন ছুটি ভোগ করে থাকেন। এখানে কাজের সময় সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ ঘণ্টা। ঘড়ি ধরে কাজের তুলনায় দক্ষতা ও নির্ভুল কাজকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এখানে। অতিরিক্ত কাজের বরাদ্দ সময় নিয়ন্ত্রিত হয় কঠোর শ্রম আইন দিয়ে। এখানকার বহু সংস্থাই সপ্তাহের চার দিন কাজের পক্ষে সওয়াল করেছে। জার্মানদের কাছে ছুটি কাটানোর অর্থ শুধুমাত্র ছুটি কাটানোই। সেখানে ফোন, ল্যাপটপের ভূমিকা থাকে না।
তালিকায় পাঁচ থেকে দশ নম্বরে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন ও ফিনল্যান্ড। অসলোতে কর্মদিবস প্রায়শই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। সেখানকার মানুষ মনে করেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো কেবল সপ্তাহান্তের জন্য রেখে দেওয়া উচিত নয়। সারা সপ্তাহ ধরেই তা করা উচিত। নরওয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৭৪.২।
ডেনমার্কের পয়েন্ট ৭৩.৭৬। কানাডার সূচকও ডেনমার্কের খুবই কাছাকাছি, ৭৩.৪৬। ৭২.১ পয়েন্ট অস্ট্রেলিয়ার। স্পেনের পয়েন্ট প্রায় ৭২। ফিনল্যান্ডের ৭০.৮৬। এশিয়ার দেশ হিসাবে ভারত ও পাকিস্তানের পরে ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের প্রাপ্ত নম্বর ৩৬.৯১। ভারতে বছরে ছুটির পরিমাণ ২১। আমেরিকার দীর্ঘ কাজের সময় এবং সীমিত ছুটির কারণে ২০২৫ সালে সমীক্ষার তালিকায় থাকা ৬০টি দেশের মধ্যে ৫৯তম স্থানে নেমে এসেছে।
আমার বার্তা/এমই