ট্রাম্পের নতুন আরোপিত শুল্কের কঠিন পরীক্ষার মুখে চীনের প্রতিবেশীরা

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২০১৬ সালে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করেন, তখন ভিয়েতনামের উদ্যোক্তা হাও লে সেটিকে সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত এসএইচডিসি ইলেকট্রনিক্স এখন প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের ফোন ও কম্পিউটার অ্যাক্সেসরিজ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।

কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক পরিকল্পনা (ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক) ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়কর’ হতে পারে বলে মনে করছেন লে। তিনি বলেন, ভিয়েতনামে আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি না। শুধু আমাদের নয়, অনেক ভিয়েতনামী কোম্পানিই নিজেদের বাজারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এসব দেশের জন্য অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়েছে। চীন একদিকে তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র মূল রপ্তানি বাজার। দুই পক্ষের চাপে পড়ে কৌশলী অবস্থান নিতে হচ্ছে এসব দেশকে

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চলতি সফর—ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ায়—এই বাস্তবতায় বিশেষ তাৎপর্য পেয়েছে। ট্রাম্প যদিও এ সফরকে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঠকানোর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন।

হোয়াইট হাউজের পরিকল্পনা অনুসারে, তারা এখন ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ওপর চীনের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করবে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এতটাই গভীর যে, এটি হয়তো বাস্তবসম্মত হবে না। ২০২৪ সালে চীনের রপ্তানি আয় ছিল রেকর্ড ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যার ১৬ শতাংশই এসেছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে।

মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী তেংকু জাফরুল আজিজ বলেন, আমরা কখনোই চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের একটিকে বেছে নেবো না। আমাদের স্বার্থ যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমরা সেখানেই প্রতিরোধ করবো।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো দ্রুততম সময়ে কূটনৈতিক আলোচনার শুরু করেছে। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তো লাম ট্রাম্পের সঙ্গে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ এক ফোনালাপে মার্কিন পণ্যের ওপর নিজ দেশের সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্র যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। থাই সরকার চাইছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৩৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকর না হোক। কারণ যুক্তরাষ্ট্র তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার।

এমন সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। বরং, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের গুরুত্ব তুলে ধরছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রচুর চিপ প্রস্তুতকারক চীনের পরিবর্তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছে। ২০২৩ সালে চীন মালয়েশিয়া থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের চিপ আমদানি করেছিল। এই পণ্যগুলো পরে আবার চীনে তৈরি ফোনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৪ শতাংশ শুল্ক এ পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে।

এ অঞ্চলের আরেক দেশ ইন্দোনেশিয়া তাকিয়ে আছে বৈশ্বিক বৈদ্যুতিক গাড়ি সরবরাহ শৃঙ্খলের দিকে। তাদের ওপর আসতে পারে ৩২ শতাংশ শুল্ক।

কম্বোডিয়া শুল্ক পেতে পারে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য ট্রান্স-শিপমেন্ট হাব হিসেবে দেশটি চীনা ব্যবসায়ীদের বড় সহায়ক।

একদিকে ট্রাম্পের শুল্ক, অন্যদিকে চীনের অতিরিক্ত রপ্তানি—উভয়ের চাপে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষায় নানা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়া চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্কারোপের পরিকল্পনা করেছে, বন্ধ করেছে চীনা ই-কমার্স অ্যাপ ‘টেমু’।

থাইল্যান্ড সীমান্তে শুল্ক পরীক্ষায় কঠোরতা এনেছে। ভিয়েতনাম চীনা স্টিল পণ্যে অস্থায়ী ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। চীনা পণ্য ট্রান্স-শিপমেন্ট নিয়েও কঠোরতা আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।

চীনের ক্ষতি থেকে উপকৃত হতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা এখন দ্রুতই চীনের বাইরে বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছেন। ভিয়েতনামের হাও লে বলেন, আগে একজন মার্কিন ক্রেতার সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগতো, এখন কয়েকদিনেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

মালয়েশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মেডিকেল রাবার গ্লাভ প্রস্তুতকারী। এই শিল্পে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তারা বড় বাজার ধরার আশা করছে। মালয়েশিয়া রাবার গ্লাভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হুং বলেন, আমরা আনন্দে লাফাচ্ছি না, কিন্তু এই শুল্ক আমাদের, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশের নির্মাতাদের জন্য লাভজনক হতে পারে।

 

আমার বার্তা/এল/এমই